• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানদের জন্য রিকশাচালক বাবার কান্না

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১  

রিকশাচালক ওমর ফারুকের দুই সন্তান মো. আব্দুল্লাহ (৭) ও ফাহামিদা আক্তার আমিনা (৪) বিরল রোগে আক্রান্ত। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে নিয়েছেন চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন, ঢাকায় নিয়ে বড় ডাক্তার দেখাতে হবে। কিন্তু ঢাকা নেবেন, বড় ডাক্তার দেখাবেন, সেই সামর্থ্য তার নেই। এ কারণে এক বছর ধরে বন্ধ আছে তাদের চিকিৎসা।

দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের সোনাপুকুর নয়া মোল্লা পাড়া গ্রামে বাস করেন হতদরিদ্র রিকশাচালক ওমর ফারুক।

সরেজমিনে গেলে ওমর ফারুক বলেন, জন্মের পর থেকে আমার দুই বাচ্চা বিরল রোগে আক্রান্ত। তাদের গায়ের চামড়া ফেটে শরীর থেকে উঠে যাওয়া শুরু করে। পরে চিকিৎসার জন্য প্রথমে পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করার পর অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুই শিশুর জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অর্থের অভাবে কোনো কূলকিনারা করতে পারছি না।
 
আব্দুল্লাহ ও আমিনার মা খালেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার দুই সন্তান অজানা রোগে আক্রান্ত, আমরা জানি না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো উপকারে পাইনি। টাকার অভাবে এক বছর ধরে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার দুটি সন্তানের একই সমস্যা তাদের দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। ঘরমকালে তাদের সমস্যা বেশি হয়, শীতকালে একটু কম। আমার স্বামীর আয় কম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সন্তান দুটির চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চাই।

প্রতিবেশীরা জানান, ফারুকের দুই ছেলে-মেয়ে কী রোগে যে আক্রান্ত, তা নাকি ডাক্তাররাও সঠিকভাবে বলতে পারেননি। বাচ্চা দুইটার চিকিৎসার জন্য তাদের বাবা-মা মানুষের কাছে ধারদেনা করেছেন, খেয়ে না-খেয়ে অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু তারা সুস্থ হয়ে ওঠেনি। ফারুকের বাড়িতে ঘরভিটা ছাড়া আর কিছু নাই। ভাড়ায় রিকশা চালান তিনি। টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ আছে। সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসত, তাহলে বাচ্চা দুইটা সুস্থ হয়ে উঠত।

পার্বতীপুর বেলাইচন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, আমি শিশু দুটিকে চিনি। আমার বাসার পাশেই তাদের বাসা। তারা জন্মের পর থেকে বিরল রোগে আক্রান্ত। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কখনো এ বিষয়ে জানায়নি। তারা চাইলে আমি সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

পার্বতীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তাপস রায় জানান, তারা দুই ভাই-বোন দিনাজপুর মেডিকেল বা দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলে হাসপাতাল সমাজসেবা অফিস থেকে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

বিরল এ রোগ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন আব্দুল কুদ্দুছ জানান, শিশু দুটির ছবি দেখে বুঝতে পেরেছি, এটি একটি জটিল চর্মরোগ। আমি মনে করি তাদের চিকিৎসা উচ্চতর প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগে করলে ভালো হবে। সেখানে তারা সফল চিকিৎসা পাবে বলে মনে করি।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –