• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

৪ লাখ টাকা হলেই পৃথিবীর আলো দেখবে ছোট্ট নূরী

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২১  

চোখ থেকেও দৃষ্টিহীন ছোট্ট ফাতেমা আক্তার নূরী। মা-বাবা ভেবেছিল চোখে অন্য কোনো সমস্যা। কিন্তু যতই দিন গড়িয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে নূরীর দুই চোখের আলোশূন্যতা। এখন সামর্থ্য না থাকলেও দৃষ্টিহীন সন্তানের চোখের আলো ফেরানোর আশায় বুক বেঁধেছেন হোটেলশ্রমিক বাবা নুর জামাল নুরু। দুর্দশাপূর্ণ পরিবারে মা রতনা বেগম শুধুই কাঁদছেন একমাত্র সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে।

চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে পরিবারটি বলছেন, এক বছর বয়সী নূরীর চোখের অপারেশন করে কর্নিয়া সংযোজন করতে হবে। একইসঙ্গে চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে। তানাহলে অন্ধত্বের অভিশাপ স্থায়ীত্বের পথ নেবে। তবে নূরীর চোখের অপারেশন ও চিকিৎসার জন্য অন্তত ৪-৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। এত টাকা তার পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।

সন্তানের চোখে আলো আর মুখে হাসি ফেরাতে কোনো কমতি নেই অসহায় মা-বাবার। এখন পর্যন্ত নূরীর চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। যার ৩০ হাজার টাকা বিভিন্নভাবে ঋণ করা। 

নূরীর বাবা নুর জামালের দাবি, ভারতের চেন্নাইয়ে তার কন্যাশিশুর চোখে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার চিকিৎসকরা। চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হলে সেটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আশার এ বাণী শোনার পর মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের সুহৃদ, মানবিক ও বিত্তশালীদের আর্থিক সহায়তা কামনা করেছেন মা রতনা বেগম। ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম ছাওয়ার (বাচ্চার) চোখ দেখি হামরা কিছুই বুজি (বুঝতে না পারা) নাই। জন্মের চার মাস পর ছাওয়ার চোখের দিক তাকেয়া মনে হইছে অন্য কোনো সমস্যা। কিন্তু পরে ডাক্তার দেকি কইছে নূরীর দুই চোখের মনি (কর্ণিয়া) জন্ম থাকি নষ্ট। ভিতরোত টিউমার হইছে। ছাওয়া চোখে কিচ্ছু দেখে না। কোল থাকি নামাইলে খালি কান্দে (কাঁদে)।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক বছরে অনেক ধার-দেনা করছি। রংপুর আর ঢাকাত নিয়্যা ভালো ভালো ডাক্তার দেখাইছি। মেলা টাকা খরচ হইছে। ঢাকার ডাক্তার ভারত যাবার কইছে। অটেকোনা (সেখানে) অপারেশন করলে নাকি ভালো হইবে। অপারেশন করতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা হামরা কোন্টো (কোথায়) পামো? সবারগুল্যার কাছ থাকি সাহায্য সহযোগিতা নেওয়া ছাড়া হামার উপায় নাই।’  

রংপুরের হারাগাছ পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের টেপাটারী বানুপাড়া এলাকায় থাকেন নুরু ও রতনা দম্পতি। তাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। এক কন্যাসন্তান নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখলেও তা এখন গুড়ে বালি। নুরের সামান্য আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তার মধ্যে শিশু নূরীর অন্ধত্বের কান্না ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। রংপুর নগরীতে একটি হোটেলে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন অসহায় দিনমজুর নুর জামাল নুরু।

হোটেলশ্রমিক নুর জামাল বলেন, আমি গরিব মানুষ। লাখ লাখ টাকা কোথায় পাব? বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে বাচ্চার চিকিৎসা করছি। প্রথমে রংপুরে দ্বীপ আই কেয়ারে ডাক্তার দেখিয়েছি। পরে পপুলার-২ ডাক্তার নিমাই চন্দ্রকে দেখিয়েছি। ওনার পরামর্শে ঢাকায় ইসলামী চক্ষু হাসপাতালেও নিয়েছি। সবশেষ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার জাহিদ স্যারকে দেখিয়েছি। সবাই আশ্বস্ত করেছে, অপারেশন করালে নাকি চোখ ভালো হবে। এজন্য ভারতে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‌‘আমার বাচ্চা জন্মগতভাবে অন্ধ। আমরা ডাকলে সাড়া দেয়। আমি যে বাবা হই, কিভাবে বুঝবে। বাচ্চা তো চোখে দেখতে পারে না। বাচ্চার মুখের দিকে তাকালে খুব কষ্ট লাগে। এখন ওর (নূরীর) দুই চোখের অপারেশন ও অন্যান্য খরচসহ কমপক্ষে ৪-৫ লাখ টাকা লাগবে।’

নুর জামাল তার পরিবার নিয়ে যেখানে থাকেন, সেই এলাকা বিড়িশিল্প এলাকা। সেখানকার বেশির ভাগ মানুষই বিড়ি ও গুল তৈরির কারখানায় কাজ করেন। নুর জামালের প্রতিবেশী সুখজান ও লাইলী বেগম বলেন, ‌বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকালে কষ্ট লাগে। ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চা, অথচ কিছুই দেখতে পায় না। এক বছর ধরে চোখের এই সমস্যা। গরিব হওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ভালো চিকিৎসা ও অপারেশন করতে পারেনি। শুনেছি ভারতে নিয়ে গিয়ে নাকি অপারেশন করালে ভালো হবে।

আরেক প্রতিবেশী বিড়িশ্রমিক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‌‘এত টাকা দেওয়ার মতো হামার গ্রামের মাইনসের (মানুষের) সামর্থ্য নেই। বিড়ি কারখানার মালিকরাসহ শহরের বড়লোকরা যদি একনা আগে আইসেন (সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা) তাহলে ছাওয়াটার একটা গতি হইবে।’

হারাগাছ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদার রহমান বলেন, ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী অবশ্যই সহযোগিতা করব। একইসঙ্গে পৌরসভা থেকেও সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে মেয়রসহ অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলব। কয়েক লাখ টাকার দরকার। এ কারণে সবার সহযোগিতা ছাড়া এত টাকা জোগাড় করা কষ্টকর।

দৃষ্টিশক্তিহীন অবুঝ শিশু ফাতেমা আক্তার নূরীর চোখের অপারেশনে কেউ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৭৪৯০২০০১৭ (বিকাশ) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –