• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

গাইবান্ধার ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি চরমে:ছাদে বগিতে গাদাগাদি ভ্রমণ

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২২  

মাত্র দুইটি আন্তনগর রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন গাইবান্ধা হয়ে ঢাকা চলাচল করে। দুটি ট্রেনে গাইবান্ধার জন্য আসন বরাদ্দ কম। ফলে কর্মমুখী যাত্রীরা ট্রেনের ছাদে ও বগির ভেতরে যত্রতত্র গাদাগাদি করে ভ্রমণ করছেন। অনেকে বিনাটিকিটে ভ্রমণ করছেন। ঈদের পরদিন থেকে এ অবস্থা চলছে। এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন দুপুরে লালমনিরহাট থেকে আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকায় যাতায়াত করছে। এই ট্রেনে প্রতিদিন গাইবান্ধার জন্য টিকিট বরাদ্দ ৮৭টি। এরমধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (কেবিনসহ) ২৭টি এবং শোভন চেয়ার ৬০টি।
 
এছাড়া প্রতিদিন রাতে রংপুর থেকে আন্তনগর রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকায় যাতায়াত করছে। এই ট্রেনে প্রতিদিন গাইবান্ধার জন্য টিকিট বরাদ্দ ৬৭টি। এরমধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (কেবিনসহ) ১৭টি এবং শোভন চেয়ার ৫০টি।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছে সরকার। এরমধ্যে অর্ধেক টিকিট অনলাইনে যাত্রীরা সরাসরি ও অর্ধেক রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে স্বাভাবিক সময়ে দুইটি ট্রেনে দৈনিক টিকিটের চাহিদা থাকে অন্তত ৩০০টি। ঈদের সময় দৈনিক চাহিদা দাঁড়ায় এক হাজার থেকে ১২০০ পর্যন্ত। ফলে ঈদের পরদিন থেকে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ছাদে, বগির ভেতরে করিডোর, দুইবগির মাঝখানে যত্রতত্র গাদাগাদি করে ভ্রমণ করছেন।

শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ ট্রেনের ছাদে উঠছেন। কেউ বগির ভেতরে যাতায়াতের রাস্তায়, কেউ করিডোরে বসে যাচ্ছেন, কেউ দুই বগির সংযোগস্থলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। কেউবা উঠতেও পারছেন না। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের ভোগান্তি বেড়েছে। অনেক নারীকে ট্রেনের ছাদেও উঠতে দেখা গেছে। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি গ্রামের চাকরিজীবী ফরিদ মিয়া বলেন, তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। বাড়িতে তার মা অসুস্থ। তিনি বাসে ভ্রমণ করতে পারেন না। তাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরতে হবে। গত ১২ জুলাই ছুটি শেষ হয়েছে। টিকিট না পাওয়ায় ঢাকায় মাকে নিয়ে ফিরতে পারছেন না। 

গাইবান্ধা শহরের পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, মালামাল আনতে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যেতে হয়। টাকা পয়সা নিয়ে যাতায়াত করেন। তাই ট্রেনকে বেশি নিরাপদ মনে করেন তিনি। কিন্তু ট্রেনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। কে কখন অনলাইনে ঢুকে টিকিট কিনছেন, বোঝা যায় না। 

একই বিষয়ে গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক ও জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, অনেকই বাসে চলাচল করতে পারেন না। এছাড়া বাসে দুঘর্টনার সম্ভাবনা বেশি। পক্ষান্তরে ট্রেনে অনেকটা নিরাপদ যাত্রা করা যায়। তাই বর্তমানে মানুষ ট্রেনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করায় কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বেড়েছে। অনলাইনের সুফল সাধারণ যাত্রীরা পাচ্ছেন না। কারণ গাইবান্ধায় টিকেটের বরাদ্দ কম। অথচ জেলায় ২৬ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। 

তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, কাউনিয়া থেকে পীরগাছা, বামনডাঙ্গা, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, শান্তাহার হয়ে ঢাকাগামী অন্তত আরো দুইটি ট্রেন চালু করা দরকার। এতে রেলের আয়ও বাড়বে এবং এই অঞ্চলের যাত্রীরা সেবা পাবে। তিনি আপাতত কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস (মিটারগেজ) ট্রেনটি কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া হয়ে ঢাকা যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও কুড়িগ্রামের লোকজন অল্প সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি কাউনিয়া, পীরগাছা, বামনডাঙ্গা, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়ার যাত্রীরাও সেবা পেতো।

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা রেলস্টেশন মাস্টার মো. আবুল কাশেম সরকার বলেন, ঈদের সময় চাহিদা অনুযায়ী টিকেটের বরাদ্দ না থাকায় যাত্রীরা ছাদে, বগির ভেতরে যত্রতত্র ভ্রমণ করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গাইবান্ধায় টিকেটের বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –