• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

রংপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়, মোনাজাতে হু হু করে কান্না

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২২  

রংপুরে বৃষ্টির জন্য দুই রাকাত ইস্তিসকার নামাজ আদায় করে বিশেষ মোনাজাত করেছেন মুসল্লিরা। স্মরণকালের অসহনীয় গরম আর তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষজন এ সময় স্বস্তির বৃষ্টির আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রংপুর জেলা সম্মিলিত ইমাম পরিষদের আয়োজনে নগরীর ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে এ নামাজ আদায় করা হয়। এতে ইমামতি করেন কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ হোসাইন। 

আগামীকাল বুধবার এবং পরদিন বৃহস্পতিবারও এ মাঠেই একই সময়ে ইস্তিসকার নামাজ আদায় করা হবে। এতে সকলকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত ইমাম পরিষদ। 

এদিকে আষাঢ় শেষে শুরু হয়েছে শ্রাবণ। এখনো দেখা নেই বর্ষার। নেই কালো মেঘের ডাকাডাকি। প্রখর রোদ আর গরমে বর্ষণের গর্জন শূন্য মেঘ। প্রকৃতির বিরূপ আচরণে চৈত্র-বৈশাখের মতো দাবদাহে ত্রাহি অবস্থা। মানুষের পাশাপাশি হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকূলও। এক পসলা বৃষ্টি আর শীতল প্রকৃতির আকুতি সবার। 

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভরা বর্ষার এই মৌসুমে মৃদু দাবদাহে পুড়ছে রংপুর অঞ্চল। স্মরণকালের অসহনীয় গরম আর তাপপ্রবাহে মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ছটফট করছে পশুপাখি ও জীবজন্তু। কড়া তাপদাহে ফসলি জমি শুকিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে আমন ধানের চারা রোপণসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ। 

এ পরিস্থিতিতে খরা ও অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সকালে ইস্তিসকার নামাজ আদায় করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। নামাজ শেষে অব্যাহত অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য ও আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য হু হু করে কাঁদতে থাকেন নামাজে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষজন।

নামাজে অংশগ্রহণ করা মুসল্লি ইয়াসির আরাফাত জীবন বলেন, আমি এমন অনাবৃষ্টি দেখিনি। এবার প্রথম এ রকম তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন ধরে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। আজকে এই নামাজ পড়তে মাঠে এসেছি। আগামী দুদিনও আসব ইনশাআল্লাহ। 

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টির দেখা নেই। আষাঢ় শেষে শ্রাবণ শুরু হয়েছে, তবুও স্বস্তির বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে শান্তি ও স্বস্তির বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছি।  অসহ্য গরম আর দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

বিশেষ এ নামাজ ও দোয়া পরিচালনা শেষে সম্মিলিত ইমাম পরিষদের সভাপতি ও কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ হোসাইন বলেন, আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চেয়েছি। তাঁর কাছেই আমরা অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি চেয়েছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং তিনিই চাইলে এই অসহনীয় গরম ও তাপপ্রবাহ থেকে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরও দুদিন এই নামাজ আদায় করব। 

এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের বছর ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২২  সালের চলতি মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৭ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

আবহাওয়া অফিস বলছে, এই সময়টাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৩  ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে গেল ১৪ দিনে রংপুর বিভাগে রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। মৌসুমের এ সময়টাতে স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি তাপমাত্রা বাড়লেও তা ২ থেকে ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হওয়ার কথা নয়। তবে এবার এর ব্যতিক্রম  ঘটেছে। 

টানা ১৪ দিন স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রা বেশি ছিল ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন উত্তরের কৃষির জন্য অশনি সংকেত বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –