• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

কুড়িগ্রামে আঙুলের অপারেশনে শিশুর মৃত্যু

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২২  

কুড়িগ্রামে আঙুলের অপারেশনে শিশুর মৃত্যু                         
৫ বছর বয়সী ছোট্ট মারুফা জাহান মাইশা। ৯ মাস বয়সে চুলার আগুনে পুড়ে যায় তার ডান হাতের আঙুল। ওই সময় রংপুরে চিকিৎসা করে হাতের ক্ষত ভালো হলেও কুঁকড়ে যায় মাইশার ডান হাতের তিন আঙুল। ৩০ নভেম্বর সকালে মাইশার হাতের অপারেশন হয় রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে। 

কিন্তু অস্ত্রোপচারের দেড় ঘণ্টা পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘মাইশার অবস্থা খারাপ। তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার জন্য গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে হবে।’ চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী হতবিহ্বল বাবা-মা ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে চলে যান মিরপুর-১ মাজার রোডের সেই হাসপাতালে। সেখানে নেয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় মারা গেছে মাইশা।

কিন্তু কিভাবে মারা গেছে তাদের মেয়ে, বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের জন্য নেয়া টাকা ফিরিয়ে দেয় মাইশার বাবা-মাকে। লাশ বাড়িতে আনতে ঠিক করে দেয় অ্যাম্বুলেন্সও। বাড়ি ফিরে যখন ছোট্ট মাইশাকে দাফনের জন্য গোসল করানো হবে, তখন গোসল করানো নারীরা দেখতে পান মাইশার নাভির নিচে পেটজুড়ে কেটে সেলাই করা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা গুঞ্জন।

এ সময় স্বজনরা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ ঢাকায় অপারেশন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। পরে নিরুপায় স্বজনরা শিশুটিকে বাড়ির আঙিনায় দাফন করে। 

ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামে। মারুফা জাহান মাইশা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ার মোজাফফর আলী ও বেলি আক্তার দম্পতির মেয়ে। তার নানা ওসমান গণি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শুক্রবার ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

মাইশার বাবা মোজাফফর বলেন, মেয়ের হাতের আঙুল ঠিক করার জন্য ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীবের কাছে যাই। তিনি সবকিছু দেখে বলেন, বুধবার সকালে অপারেশন করা হবে। রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল মেডিকেলে তার শেয়ার আছে জানিয়ে বলেন, সেখানে অপারেশন করালে খরচ কম লাগবে। বুধবার সেখানে হাতের অপারেশন করার সময় মেয়ে মারা যায়। পরে তারা আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে ধমকিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের যে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা পাঠায় সে অ্যাম্বুলেন্স বগুড়া পর্যন্ত এসে আমাদের অন্য আরেকটা গাড়িতে তুলে দেয়। ঐ সময় অ্যাম্বুলেন্সে চালক বলে তারা অন্য কোথাও যাবে। পরে বাড়িতে এসে মেয়েকে গোসল করার সময় স্থানীয় মহিলারা দেখেন, মেয়ের তলপেটের পুরো অংশ সেলাই করা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটা দেখে নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি না। হাত অপারেশন করাতে গিয়ে তারা কেন আমার মেয়ের পেট কাটলো তা জানি না। আমাদের কোনো কাগজপত্রও দেওয়া হয়নি।

মাইশাকে গোসল করানো মফিজা খাতুন বলেন, মেয়ের হাতের আঙুল কাটা ছিল। পরে গোসলের সময় দেখতে পাই ওর নিচ পেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা। পরে সবাইকে জানাই।

মাইশার মা বেলি বলেন, আমি কী ভুল করলাম! কেনো মেয়েকে নিয়ে গেলাম। ওরা ডাক্তার না, কসাই। আমার মেয়ের পেট কাটলো কেন? ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।

চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব বলেন, আমি অপারেশন করিনি। আমার শেয়ার থাকা আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অপারেশন অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছিলাম। সেখানে ঢাকা মেডিকেলের প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক (সহকারী অধ্যাপক) ডা. শরিফুল ইসলাম অপারেশন করেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত শিশুটি মারা যায়। আমি নিজেও এ ঘটনায় শক্ড (হতবাক) বলে জানান তিনি।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –