• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইঁদুরের ধানে ভাগ বসাচ্ছে শিশুরা

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২২  

কুড়িগ্রামে অগ্রহায়ণের ঘ্রাণে নবান্নের উৎসব না থাকলেও হতদরিদ্র শিশুদের ধান কুড়ানোর ব্যস্ততা যেন আরেক উৎসবে পরিণত হয়েছে। গ্রামগঞ্জে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইঁদুরের গর্তে হাত দিয়ে ধান বের করছে শিশুরা। সংগ্রহ করা ওই ধান বিক্রি করে তারা কিনবে শীতের পোশাক। কেউবা শখের বসে ধান কুড়িয়ে খাবে সন্দেশ, জিলাপি। এমনই চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার ধানক্ষেতে।

কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ থেকে কৃষকরা ধান তুলে নিয়ে যাওয়ার পর একদল শিশু-কিশোর হাতে খুন্তি-কোদাল, চালনি, ডালা, ব্যাগ নিয়ে ইঁদুরের গর্ত খুঁজে ফিরছে। ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে জমানো ধান ব্যাগে ভরছে তারা। এছাড়া জমিতে পড়ে থাকা ধানও কুড়িয়ে ব্যাগে ভরে নিচ্ছে শিশুরা। কুড়িয়ে পাওয়া সেই ধান ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে তারা। আর ওই টাকা দিয়ে মেটাচ্ছে তাদের ছোট ছোট চাহিদা।

জানা গেছে, চলতি বছরে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি মণ ধান স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

মাঠে ধান কুড়াতে আসা শিশু মুসা (৮) বলে, আমরা বিভিন্ন মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করে তা বিক্রি করি। ওই টাকা দিয়ে শীতের পোশাক কিনবো।

শিশু জনি (১০) বলে, ধান কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা ধানের শীষ ও ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহ করি। সারাদিন চার-পাঁচ কেজি ধান কুড়াই। সেই ধান বিক্রি করে নিজের শখ পূরণ করি।

আরেক শিশু মমিন বলে, ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে ধান সংগ্রহ করতে একটু ভয় লাগে। মাটি খুড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে ইঁদুর বের হয়। তারপরও শখের বসে বন্ধুরা মিলে ধান কুড়াচ্ছি। পড়ে থাকা ধানের শীষ কুড়ানোর চেয়ে ইঁদুরের গর্তে ধান বেশি থাকে, সেই ধান কুড়াতে খুব আনন্দ হয়।

কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, প্রতি বছরই জমি থেকে ধান তোলার পর গ্রামের শিশুর মাঠে ধান কুড়াতে আসে। আমরা বাধা দিই না। ওই ধান পেয়ে ওরা মজা পায়।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, এবারে জেলায় ১ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।

শিশুদের ধান কুড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, জমি থেকে কৃষকেরা ফসল তোলার পর গ্রামগঞ্জের শিশুদের ধান কুড়াতে দেখা যায়। কখনো তারা ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে ধান সংগ্রহ করে। এটা আসলেই বিপজ্জনক, কেননা গর্তে অনেক সময় সাপ, পোকামাকড়, বিচ্ছু কিংবা ইঁদুরের কামড়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।

তাই শিশুদের এভাবে ধান সংগ্রহ করতে দেওয়া উচিত নয় বলে মনে তিনি।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –