• শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৯ ১৪৩১

  • || ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১৫ দিন ঘুরেও আশ্রমে জমি দান করতে পারলেন না বৃদ্ধ অনিল

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

জীবনের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে ১৫ দিন ধরে ঘুরেও আশ্রমে ৫৪ শতাংশ জমি দান করতে পারলেন না বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত (৮৫)। লিখে প্রস্তুত করা দলিল সম্পাদনের মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা সেটি ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন বৃদ্ধ।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলেও দলিল সম্পাদন করেননি সাব-রেজিস্ট্রার। বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বৈরাগী ভিটার এলাকার মৃত খগেন্দ্র নাথ মহন্তের ছেলে।

জানা গেছে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কয়েক একর জমির মালিক অনিল চন্দ্র মহন্ত বৈরাগী। তার নাম অনুসারে ওই এলাকাটির নামকরণ হয় বৈরাগীর ভিটা। যৌবনে জমিগুলো আগলে রাখলেও বার্ধক্যে এসে সন্তানরা অধিকাংশ জমি বিক্রি করে ফেলেছে। এতে অনেকটাই অসন্তোষ বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র। বৃদ্ধ অনিলের দুই স্ত্রীর সংসার। দুই সংসারে দুই ছেলে এক মেয়ে। বর্তমানে ছেলের ঘরেই নাতি-নাতনিও রয়েছে অনিলের।

ইতোপূর্বে সন্তানদের নামে বেশ কিছু জমি লিখে দিয়েছেন অনিল চন্দ্র মহন্ত। ছোট ছেলে রণজিৎ মহন্ত জমি বাড়ালেও বিপথগামী বড় ছেলে অতুল চন্দ্র মহন্ত সব বিক্রি করে ফেলেছেন। এদিকে অনিল চন্দ্র মহন্তের জীবনের শেষ ইচ্ছে আশ্রমে জমি দান করবেন। শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে ছেলেদের নির্দেশও দেন তিনি।

কিন্তু বড় ছেলে অতুল চন্দ্র মহন্ত আপত্তি জানান। তার দাবি, আশ্রমে দান করে বাকি জমি ছেলেদের দিয়ে দিতে হবে। এক পর্যায়ে বৃদ্ধ অনিল রাজিও হন। তবে ছেলেরা তার সম্পত্তি নষ্ট করবে ভেবে নাতিদের নামে সমহারে দলিল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

সেই ইচ্ছে পূরণ করতে গত ১৫ দিন ধরে বয়সের ভারে নাজুক অনিল চন্দ্র মহন্ত ছুটছেন আদিতমারী সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে বড় ছেলে অতুল চন্দ্র মহন্ত একটি চক্রকে লেলিয়ে দিয়ে দলিল করতে বাঁধা দিচ্ছেন। প্রাণ ভয়ে রেজিস্ট্রার অফিস ত্যাগ করেন বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) অনিল চন্দ্র মহন্তের ৪টি দলিল সম্পাদন করার আশ্বাস দেন সাব-রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রশিদুজ্জামান। সেই আশ্বাসে দলিল লিখে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যাওয়া মাত্রই সাব রেজিস্ট্রারের সামনে থেকে দলিল ৪টি ছিনিয়ে নেন ওই চক্রটি। তৈরি হয় হট্টগোল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি সহায়তা নেন সাব-রেজিস্ট্রার। তবে দলিল ৪টি সম্পাদন সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। বৃদ্ধ অনিলকে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত থানায় বসে রেখে সন্ধ্যায় বাড়ি পাঠানো হয়। অপর দিকে দলিল লেখক রুহুল আমিন ও অনিল চন্দ্র মহন্তের ছোট ছেলে রণজিৎ আর নাতিদের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বড় ছেলে অতুল চন্দ্রের স্ত্রী চন্দনা মহন্ত।

বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত বলেন, দলিল পার করে দিতে চেয়ে আমাকে থানায় এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অফিসের সময় শেষ হলে বাড়ি পাঠায়ে দেয়। দলিল না দিলেও আমি মারা গেলে ছেলে বা নাতিরা জমি পাবে। কিন্তু আশ্রম তো পাবে না। যা আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে। কখন যে মরে যাই। সরকারি লোকরাই আমাকে জমির দলিল দিতে দিল না। ভগবান তাদের বিচার করবে।

আদিতমারী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রশিদুজ্জামান বলেন, ছেলের অভিযোগের পারিবারিক সমাধান করতে প্রথম দিন বৃদ্ধ অনিলকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দিন দলিলটি আমার হাতে আসার আগেই একটি পক্ষ ছিনিয়ে নেওয়ায় হট্টগোল তৈরি হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে বৃদ্ধ অনিলের দলিল ৪টি সম্পাদন করা হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। দাতা যাকে ইচ্ছে দান করতে পারেন, এতে বাঁধা দেওয়া অপরাধ।

তবে আদিতমারী থানা পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কোনো শঙ্কা ছিল না এবং নেই। সাব-রেজিস্ট্রার চাইলে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে দাতাকে অফিসে পৌঁছে দেওয়া হত।

লালমনিরহাট জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, দাতা যাকে ইচ্ছে দিতে পারেন। কাগজ সঠিক হলে অবশ্যই দলিল সম্পাদন হবে। পরিস্থিতি উত্তাপ্ত থাকায় দলিলটি সম্পাদন করেনি বলে শুনেছি। তবে দলিলটি পরে সম্পাদন করতে বলেছি। কেন করেনি, তা খতিয়ে দেখা হবে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –