• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

করোনার টিকাদানে সর্বোচ্চ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

করোনার টিকাদানে সর্বোচ্চ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া যাত্রা ১ বছরের মাথায়ই দেখেছে সাফল্য। বিশেষ করে প্রথম ডোজের আওতায় চলে এসেছে অধিকাংশ মানুষ। লক্ষ্যমাত্রার বাকি থাকা মানুষদেরও এই মাসের মধ্যেই টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ‘১ দিনে ১ কোটি’ টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি একযোগে সারাদেশে ১ কোটি টিকা দেয়া হবে এবং তারপর আর দেশে প্রথম ডোজের টিকা গ্রহীতা কেউ থাকবে না বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর এ লক্ষ্যেই এক সপ্তাহ আগেই প্রস্তুতি শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এক্ষেত্রে শিথিল হয়েছে টিকা গ্রহণের কিছু শর্ত। অধিদফতর বলছে, এদিন টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধন লাগবে না। কেন্দ্রে গিয়ে নাম লিখিয়েই নেয়া যাবে টিকা। শুধু ওইদিন নয় প্রথম ডোজের টিকা নিতে আর কখনও রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধনই লাগবে না। সফলভাবে এ কর্মসূচী সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত জনবলও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন প্রায় ১১ কোটি মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ। বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ২ কোটিরও বেশি মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে ৭২ শতাংশ মানুষ এসেছে টিকার আওতায়।

জানা যায়, ১ম ডোজের টিকার লক্ষ্য পূরণের লক্ষ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারিই শেষদিন হিসেবে প্রথম ডোজের টিকাদানের জন্য বড় ধরনের ক্যাম্পেন হবে। এদিন ১২ বছরের বেশি বয়সী মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ১২ কোটি মানুষের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিন ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি করে কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রতিটি উপজেলার হাসপাতালে নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরেও থাকবে অতিরিক্ত পাঁচটি করে মোবাইল টিম। এছাড়া জেলা পর্যায়ে নির্ধারিত টিকা কেন্দ্র ছাড়াও ২০টি করে অতিরিক্ত মোবাইল টিম থাকবে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ করবে তিনটি করে টিম। জানা যায়, এদিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি জোনে ৩০টি করে অতিরিক্ত টিম থাকবে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি জোনে ৪০টি, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি জোনে কাজ করবে ৬০টি করে টিম। এছাড়া, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি জোনে ২৫টি করে টিম টিকাদানের জন্য থাকবে। উপজেলা ও জেলার প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০০ এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫০০ লোককে টিকাদানের লক্ষ্য থাকবে। এসব জায়গায় প্রথম ডোজ নিতে আসা কারোই কোন রেজিস্ট্রেশন বা জন্ম সনদ লাগবে না।

বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসিএএইচ এ্যান্ড পিএইচসি) ডাঃ শামসুল ইসলাম বলেন, প্রথম ডোজের টিকাদানে আমরা লক্ষ্য পূরণের দ্বারপ্রান্তে। টিকার অনিশ্চিয়তার পর্যায় থেকে এখন আমরা সাফল্যের যে চূড়ায় পৌঁছাতে পারছি এর জন্য সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানাই। সাধারণ মানুষেরও টিকা গ্রহণে যে স্বতঃস্ফূর্ততা তাও কুর্ণিশ করার মতো।

আগে করোনার টিকার লক্ষ্যমাত্রা ৮০ শতাংশ জনগণ থাকলেও গতমাসে সরকার ১১.৯২ কোটি বা মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে। গত মাসে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকা দেয়া হবে মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ মানুষকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ীই এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মোট ১১.৯২ কোটি জনগণ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ১০.০৬ কোটি মানুষ। তাই এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘একদিনে এক কোটি’ ডোজ টিকা দেয়া হবে। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যেই ১ম ডোজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা সফল হব। টিকার কার্যক্রমের সফলতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের এখনও ৮ কোটি টিকা স্টকে আছে। প্রায় ২৬ কোটি ডোজ টিকা আমরা হাতে পেয়েছি। আরও পাঁচ কোটি আসবে। এই মুহূর্তে বাড়তি টিকার প্রয়োজন নেই। চীনের সিনোফার্মের সঙ্গেও আমাদের একটি বেসরকারী কোম্পানির টিকা তৈরির চুক্তি রয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুত আছি। যখনই বলব টিকা লাগবে তখনই তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তবে আমাদের এই মুহূর্তে টিকার প্রয়োজন নেই বলে সেদিকে জোর দিচ্ছি না। সরকারীভাবে টিকা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক কম। সম্প্রতি এক সমীক্ষাতেও দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগই টিকা নেননি। আর যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে মৃত্যুহার কম। পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও কম। এই অবস্থায় দ্রুততম সময়ে সবাইকে টিকা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর এর জন্যই ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি বিশেষ কর্মসূচী পরিচালনা করবে। লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে এদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক টিকা দেয়ার। সেক্ষেত্রে যারা এখনও টিকা নেয়নি, তাদের সবাইকে এই কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এরপর আর প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হবে না। এরপর দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ প্রয়োগ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। পাশাপাশি চলবে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ। ভাসমান মানুষ বা জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এমন মানুষদেরও টিকা দেয়া হবে।

গত বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় ভারত থেকে আসা অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে। কিন্তু ওই সময় দেশটিতে করোনার ডেল্টা ধরনের মহামারী আকার ধারণ করলে বন্ধ করে টিকা রফতানি। ফলে বাংলাদেশেও মুখ থুবরে পড়ে টিকাদান কার্যক্রম। কিন্তুটিকাপ্রাপ্তিতে সরকারের নানামুখী তৎপরতায় অবশেষে সাফল্য আসে। চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দিয়ে আবারও শুরু হয় টিকাদান কার্যক্রম। এরপর ধারাবাহিকভাবে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসতে থাকে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রও পাঠাতে শুরু করে ফাইজারের টিকা। এতে টিকাদান কার্যক্রম চলে পূর্ণোদ্যমে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গত বছরের ১ নবেম্বর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকাদান কর্মসূচী। ১৬ নবেম্বর থেকে রাজধানীর বস্তিগুলোর বাসিন্দাদেরও টিকা দেয়া শুরু হয়।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –