• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

কক্সবাজারে স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গা বেড়েছে ৫ গুণ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩  

 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের চেয়ে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। তারা স্থানীয়দের চাকরি-বাকরি, কাজকর্ম নিয়ে নিচ্ছে। কয়েকদিন পর স্থানীয় মানুষজন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আব্দুল মোমেন বলেন, প্রতি বছর রোহিঙ্গাদের পেছনে ১.৯ বিলিয়ন (১৯০ কোটি) মার্কিন ডলার খরচ করতে হচ্ছে আমাদের। তাদের জন্য অবকাঠামো বানাতে হয়েছে। সবমিলিয়ে আমরা চাই তারা তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাক।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এখনো সহায়ক পরিস্থিতি হয়নি- এমন মন্তব্য করা দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

জাতিসংঘ বলছে- রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এখনো সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি- এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকেই অনেক কিছু বলে। তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বর্গমাইলে মাত্র ৯০ জন লোক বাস করে। এ পরিমাণ জায়গায় আমাদের এখানে তিন হাজার ৩০০ লোক থাকে। তাদের জায়গা ও সম্পদের অভাব নেই। তাদের লোক দরকার। তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যায় না কেন? আমি সব দেশকে বলেছি- রোহিঙ্গাদের নিয়ে যান। কানাডা বলল, তারা নেবে। তাদের প্রতি বর্গমাইলে পাঁচ-সাতজন লোক থাকে। এখন পর্যন্ত তারা মাত্র ৯ জন লোক নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নেয়ার কথা বলে মাত্র ৬২ জন নিয়েছে। কোথায় ২০ না ৩০ হাজার করে লোক প্রতি বছর নেবে, অথচ তারা এর ধারে-কাছে নেই।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প কবে নাগাদ শুরু হবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, তাও আমরা বলতে পারবো না। মিয়ানমার দুই দুইবার তারিখ নির্ধারণ করেছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে, কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। আন্তরিকতা না থাকলে কাজ হয় না। ওদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব আছে, না হলে এতদিন প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হয়ে যেত।

চীন এক্ষেত্রে কী আশা দিয়েছে- তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। যে কারণে চীন আমাদের পক্ষ হয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে, আলাপ করছে। তারা বোঝে, আমরা এই রোহিঙ্গাদের বেশিদিন রাখতে পারবো না। কিন্তু চীনের কাছ থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা পাওয়া যায়নি।

এরই মধ্যে মিয়ানমারের দুটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে, রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিরাও মিয়ানমারে গেছে। চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি কোনো আশার কথা শুনিয়েছেন- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা কাজ সহজ করে দিচ্ছে, সহায়তা করছে। যে কারণে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে। এতে আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। অবশেষে হয়তো তারা যেতে শুরু করবে।

রোববার বৈঠকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে- জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, তিনি বছর দশেক আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। এতদিন পর এসে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন দেখেছেন, সেই গল্প বলেছেন। তিনি পদ্মাসেতু দেখতে গিয়েছিলেন। তাদের ঠিকাদাররাই সেতুতে কাজ করেছিলেন। পদ্মাসেতু ও রাস্তাঘাট দেখে তার খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি বলেছেন- ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ এক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলতেই চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত দেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করছি। চীন-মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে ত্রিপক্ষীয় আলাপ করছি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল দিতেন, তারা টাকা-পয়সা কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে অনেক বেশি কমিয়ে দিয়েছেন। যেমন, আগে যুক্তরাজ্য ১২৬ মিলিয়ন (১২ কোটি ৬০ লাখ) মার্কিন ডলার দিত, কিন্তু এ বছরে তারা ৫.৪ মিলিয়ন (৫৪ লাখ) ডলার দিয়েছে। তারা আমাদের দেয়নি, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারকে (ইউএনএইচআর) দিয়েছে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –