• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আইন করেছি, মিনিকেট চাল থাকবে না: খাদ্যমন্ত্রী

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৪  

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে ধানের জাত, উৎপাদন তারিখ ও বিক্রয়মূল্য সংবলিত চালের বস্তা বাজারে চলে আসবে। আর ছয় মাসের মধ্যে চাল পলিশিং বা ছাঁটাই বন্ধ করা হবে। তারপর কেউ যদি চাল ছাঁটাই করে চিকন করে তাহলে তাদের মেশিন জব্দ করা হবে।

আজ বুধবার (৮ মে) রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত খাদ্যবাহিত রোগ ও স্বাস্থ্য বিপত্তি নিরসনে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘চকচকে চাল খাওয়ার ফলে আমাদের আমাদের জাতীয় ক্ষতি হয়। এই চকচকে চাল খেতে গিয়ে ১৬ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল নষ্ট হয়। শুধু পলিশ করার কারণে।

পলিশ করার সময় স্যালাইন পানি বা মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। আমরা আইন করেছি, মিনিকেট চাল থাকবে না। পহেলা বৈশাখ থেকে সেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেটা হচ্ছে চালের বস্তার গায়ে ধানের জাতের নাম, উৎপাদন তারিখ ও দাম উল্লেখ রাখতে হবে। বাজারে এখনো পুরোপুরি আসেনি, তবে আসতে শুরু করেছে।’

এখনো বাজারে পুরাতন চাল আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেগুলো শেষ হওয়ার পর আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন বস্তার চাল ছাড়া পাওয়া যাবে না। যে আইন করা হয়েছে, আগামী দুই, চার বা ছয় মাস পরে আর পলিশিং চাল উৎপাদন করা যাবে না। আর যারা পলিশিং করছে, আমরা গিয়ে মেশিন জব্দ করা শুরু করব। আর বাধ্য করা হবে, সেই চাল (পলিশি ছাড়া) খাওয়ার জন্য।

আমরা অনেক কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চাই সমর্থন। আমাদের কষ্ট লাগে, চালের পুষ্টি ছাঁটাই করে ফেলে দিচ্ছি।’
ভোক্তাদের অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তাদের অভ্যাসের দোষ আছে। একমাত্র বাংলাদেশে চালের মধ্যে কার্বোহাইড্রেড ছাড়া কিছুই নাই। আমরা যদি আইন করে দিই, পলিশ করা, চকচকে চাল খাবেন না। কেউ মানবেন? মানবেন না। তাহলে ভোক্তাদের দোষ তো হবেই। বাড়িতে রং দিয়ে জর্দা, বিরিয়ানি বানান। এটা তো জাফরান রং দিয়ে বানান। বিয়েবাড়ির খাবারও জাফরান রং দিয়ে বানায়। খুব সুন্দর করে সেজেগুজে গিয়ে সেগুলো আমরা তৃপ্তি করে খাই। এভাবে ক্যান্সারের বীজ শরীরের মধ্যে নিয়ে নেই। অনেকে রঙিন আইসক্রিম কিনে খায়। এ জন্য ভোক্তারা যদি নিজেদের অভ্যাস-আচরণ পরিবর্তন না করেন তাহলে আইন করে কিছুই হবে না।’

অনুষ্ঠানে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত তেল ব্যবহার, অতিরিক্ত তাপে রান্না করে, আমরা কখনো কখনো খাদ্যকে অখাদ্য বানিয়ে ফেলি। এ জন্য মানুষদের সচেতন হতে হবে। তাহলে খাদ্য নিরাপদ করা সম্ভব হবে।’

সেমিনারের আগে, এদিন সকালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় সাতটি মোবাইল ল্যাবের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী। যেগুলোর মধ্যে একটি রাজধানী ঢাকা এবং বাকি ছয়টি বিভাগীয় পর্যায়ে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করবে। গাড়িযুক্ত মোবাইল ল্যাবগুলো ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে চীন থেকে কিনে আনা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ এই মোবাইল ল্যাবরেটরির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খাদ্যে ভেজাল শনাক্ত ও দূষণ রোধ করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ল্যাবে পরীক্ষা করা দুধের মধ্যে ডিটারজেন্ট, স্টার্চ, ইউরিয়া আছে কি না। একইভাবে ঘি’তে বনস্পতি বা হাইড্রোজিনেটেড এডিবল ফ্যাটের উপস্থিতি, হলুদ গুঁড়ায় লেড ক্রোমেট, মরিচের গুঁড়ায় ইটের গুঁড়া, গোলমরিচে পেঁপে বীজ, নারিকেল তেলে ভেজাল, শাক-সবজি, ফলমূলে রং ও বালাইনাশকের মাত্রা, মধুতে চিনির মিশ্রণ, পাউরুটিতে ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেট, খাদ্যে অননুমোদিত কৃত্রিম রং, খাদ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতিসহ আরো অনেক পরীক্ষা স্বল্প সময়ে করা যাবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া, সদস্য আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভিন্টিভ ও সোশ্যাল মেডিসিনের ডিন ডা. মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –