• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ স্মারক

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত জোরাল করতে একাত্তর সালে ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের উদ্যোগে প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন কলকাতার আর্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ অর্থাত্ অধ্যক্ষ চিন্তামনি কর বাঙালি শিল্পীদের রংতুলি ও ক্যানভাস কিনে দিয়েছিলেন। আমাদের শিল্পীরা অসাধারণ সব ছবি এঁকেছিলেন। তাদের ছবিতে উঠে এসেছিল মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, বাংলাদেশি শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্র, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানা প্রেক্ষাপট ও স্বাধীনতার দাবি প্রভৃতি।

এ সব ছবি মানুষকে উদ্বেলিত করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত করে তুলতে প্রভাব রেখেছিল। সে খবর ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কাজ করেছিলেন তাদের মধ্যেও। দেশান্তরিত শিল্পীদের আঁকা তৈলচিত্রগুলো একাত্তর সালে ভারতের কলকাতা ও দিল্লি এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্যই এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সেই প্রদর্শনীর বেশ কিছু দুর্লভ সাতটি চিত্রকর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ স্মারক তুলে দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের সংগ্রহ থেকে ছবি হস্তান্তর করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। শুধু ছবিই নয় মুক্তিযোদ্ধা মেয়েদের উদ্দেশে লেখা সুফিয়া কামালের চিঠি, প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সংগ্রহ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই...। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শন করা হবে মুক্তিযুদ্ধের সুহূদ মেরি ফ্রান্সিস ড্যানহ্যামের দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের কিছু মূল্যবান স্মারকও। সমপ্রতি তিনি স্মারকগুলো জাদুঘরে হস্তান্তর করেন। এখন থেকে সেসব চিত্রকর্ম ও স্মারকগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও প্রদর্শন করা হবে।

এ উপলক্ষ্যে গতকাল আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘স্মারক ও অনুদান প্রদান’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, স্মারক বক্তৃতা করেন লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী শাহরিয়ার কবির, বক্তব্য রাখেন শিল্পী বীরেন সোম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সদস্য সচিব সারা যাকের প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মা সুফিয়া কামালের চিঠি পাঠ করেন মেয়ে সুলতানা কামাল। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের গ্রন্থ হস্তান্তর করেন তার স্ত্রী সিদ্দিকা জামান। পরে অর্থ অনুদান গ্রহণ পর্বে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।

শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই স্মারকগুলো মানুষের সামনে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে। ডা. সারওয়ার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে স্বাধীনতা এত দ্রুত অর্জন করা সম্ভব হতো না। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও এই সাধারণ মানুষের প্রেরণায় এগিয়ে চলে।

চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রয়াত শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তীর ৭২–৩৬ ইঞ্চির একটি তৈলচিত্র। বাঙালি নারীর প্রতি পাকিস্তানি বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতন ফুটে উঠেছে। আরো আছে শিল্পী বীরেন সোম, শিল্পী নিতুন কুন্ডু, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, শিল্পী প্রাণেশ মন্ডল ও শিল্পী আবুল বারক আলভী ও শিল্পী রনজিত্ কুমার নিয়োগীর চিত্রকর্ম।

অনুষ্ঠানে শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. আজাহারুল হকের স্ত্রী সৈয়দা সালমা হক ‘সিলিংফ্যান , শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর মেয়ে অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা ‘স্মৃতিস্মারক রেকর্ড’, মাহবুব বারী জামালপুর জেলায় ঔপনিবেশিক শাসন, বিভিন্ন আন্দোলন, জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে ১০৫৪ সালে প্রকাশিত গোলাম মোহাম্মদ এর লেখা ‘জামালপুরের গণ-ইতিবৃত্ত’ বইটি হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে গ্রহণ করা হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনুদানও।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘মীর আখতার লি.’-এর মীর নাসির হোসেন ‘সম্মানীয় পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে জাদুঘরের স্থায়ী তহবিলে ৬০ লাখ টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। এ ছাড়াও জাদুঘরের সুহূদ অজয় দাশগুপ্ত, ইরেশ যাকের, ড. সায়মা আলী অদিতি, শ্রিয়া সর্বজয়াসহ আরো কয়েক জন সুহূদ প্রত্যেকে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জাদুঘরে অনুদান হিসেবে প্রদান করেন।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –