• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মানব ইতিহাসে সর্বোচ্চ পৃথিবীর কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২২  

গত মে মাসে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি ছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু সংস্থা ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফিরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)। 

নোয়ার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, মনুষ্যসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, সিমেন্ট উৎপাদন কিংবা বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব এমন মাত্রায় পৌঁছেছে। সাধারণত প্রতিবছর মে মাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাড়ে।

৩ জুন বিজ্ঞানীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনা লাও আগ্নেয়গিরির ওপর স্থাপিত নোয়ার আবহওয়া স্টেশনে গত মে মাসে সর্বোচ্চ ৪২১ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম) কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিমাপ করা হয়। ২০২১ সালের মে মাসে এই হার ছিল ৪১৯ পিপিএম এবং ২০২০ সালের একই সময় ছিল ৪১৭ পিপিএম। এই স্টেশনটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয় দূষণের প্রভাব থেকে প্রকৃত দূষণমাত্রা আলাদা করতে পারে। 

নোয়া জানায়, শিল্পবিপ্লবের আগে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ছিল গড়ে প্রায় ২৮০ পিপিএম। শিল্পবিপ্লব শুরু হয় সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি। ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের কারণ ও ফলাফল— ইতিহাসে মোটামুটি ১৭৬০-১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে কৃষি এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থা থেকে আধুনিক শিল্পায়নের দিকে গতি শুরু হয়। এ সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর সমুদ্র যাত্রা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের পথ খুলে দেয়। এরপর পুঁজিবাদের উদ্ভব, বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার, কয়লার খনি আর ইস্পাতের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অনেক শিল্প শহর আর কারখানা গড়ে ওঠে। এ সময় থেকেই মূলত বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। 

বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা বলেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ৩৫০ পিপিএম থাকা উচিত। 

কোভিড মহামারির কারণে দীর্ঘদিন শিল্পকারখানা বন্ধ এবং মানুষের তৎপরতা অত্যন্ত সীমিত থাকায় ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমে যায়। 

কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যানবাহন, কলকারখানা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ব্যাপকভাবে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন শুরু হয়েছে। বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব ৪০ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন। মানব ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ। 

এ ব্যাপারে নোয়ার প্রশাসক রিক স্পাইনার্ড বলেন, ‘বিজ্ঞান অস্বীকারের সুযোগ নেই। মানবজাতি যেভাবে জলবায়ুকে বদলে দিচ্ছে, সেটির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি এবং অবকাঠামোকে অবশ্যই উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান। মৌনা লোয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের যে মাত্রা পরিমাপ করা গেছে তা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সতর্কবার্তা।’ 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –