• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

লকডাউনে বদলে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের চিরচেনা রূপ

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২১  

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়েও দিন দিন বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। লকডাউনে জেলার ১৪ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের জনারণ্য আজ যেন শূন্য! জেলার সড়কগুলোতে নেই কোনো ব্যস্ততা। থমকে গেছে সব। বদলে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের চিরচেনা রূপ। পাখির চোখে দেখা এমনি লকডাউনের চিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে ঠাকুরগাঁও শহরের বদলে যাওয়া রূপটি। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। 

এক সময় সকাল হলেই বিভিন্ন সড়কে শোনা যেত হাজারো যানবাহনের আওয়াজ। কিন্ত আজ শোনা যায় না সেই যানবাহনের আওয়াজ। একেবারেই থমকে রয়েছে শহরটি। তবে থমকে যাওয়া এই শহর আবারও গতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। যারাই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৬৭ জন এবং মারা গেছেন ৯৫ জন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ব্যস্ততম সব সড়কেই ফাঁকা রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না ঘর থেকে। এক সময়ের ব্যস্ততম সড়কগুলো আজ করোনার থাবায় রয়েছে নীরব। করোনায় থাবায় সকলেই যেন ঘরমুখী।  এরপরও বিশেষ প্রয়োজনে অনেককেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে। কোনো যানবাহন না পাওয়ায় কেউ কেউ হেঁটে চলে যাচ্ছেন নিজের গন্তব্যে। আবার অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর পাচ্ছেন রিকশা। তবে পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।  

সড়কে নেই কোনো অপ্রয়োজনীয় যানবাহন। নেই রেলগাড়ির আওয়াজ। বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ছে না কোনো দূরপাল্লার বাস, নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো দোকান ছাড়া খোলা হচ্ছে না অন্য কোনো দোকান। নিস্তব্ধ শহরে শুধু চোখে পড়ে কর্মহীন-অসহায় মানুষদের। কেউবা বসে রয়েছেন রেলের প্ল্যাটফর্মে, কেউবা বসে রয়েছেন রাস্তার ধারে। দুমুঠো খাবারের সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন তারা।

শহরের সার্কিট হাউসের সামনে কথা হয় অটোরিকশা চালক সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অটোরিকশা চালিয়ে বাবা-মা, বউ-বাচ্চা সবাইকে চালাতে হয়। চলতি লকডাউনে এই প্রথম কোনো উপায় না পেয়ে আমাকে বের হতে হয়েছে। কিছু করার নেই। পরিবার চালাতে পেটের দায়ে বের হতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমার অটোরিকশা আটকে দিয়েছে, বলে লকডাউন। কী করবো আমরা? বড়লোকেরা আরামে থাকবে লকডাউনে, আর আমাদের মতো দিনমজুর যারা তারা কষ্টে থাকবে।
শহরের রোড রেলস্টেশনে কথা হয় গাড়িচালক ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি গাড়ি চালাই, সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে। বেশ কিছুদিন ধরেই লকডাউনের কারণে গাড়ি চালানো বন্ধ। মহাজন বলে লকডাউন, পুলিশ বলে লকডাউন, আমরা যাব কার কাছে? আমাদের করার কী আছে? এভাবে যদি না খেয়ে থাকতে হয় তাহলে করোনায় মরাই ভালো। সরকার আমাদের মতো অসহায়-কর্মহীনদের দেখলে ভালো হতো। 

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম বলেন, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই মানুষ সচেতন হোক। কেউ যাতে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে না বের হয় সেই বিষয়টি আমরা দেখছি। যারা বের হচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমি মনে করি মানুষ সচেতন হলে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। যারা নিয়ম ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও জেলায় যেসব অসহায় মানুষ রয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের পর্যপ্ত ত্রাণ সহায়তা রয়েছে। আমরা প্রয়োজন মতো সেগুলো বিতরণ করবো।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –