• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু সাগরকে নিয়ে বিপাকে পরিবার

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২১  

অসহায় মায়ের কোলে অসুস্থ সন্তান জুনাইদ ইসলাম সাগর (৩)। সন্তানের সঠিক চিকিৎসার খোঁজে বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা জেসমিন বেগম। কী করবে? কোথায় যাবেন? তা নিয়ে চোখের পানি ফেলে দিন কাটছে এই মায়ের। কথা বলতে গেলেই নিজের সন্তানের সঠিক চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই মা।

ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিডডাঙ্গী পাইকারবস্তি গ্রামের বিপ্লব আলী ও জেসমিন বেগমের একমাত্র সন্তান সাগর।

নেই নিজস্ব কোনো ঘরবাড়ি। নেই পরিবার চালানোর মতো কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা। সন্তানের চিকিৎসার চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা ও বাকপ্রতিবন্ধী বাবা।

জন্মের পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও হঠাৎ যেন পরিবর্তন আসে ছোট্ট এই শিশুর জীবনে। ফুলে উঠেছে তার সমস্ত শরীর, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার চোখ, বেড়ে গেছে তার পেট।

কিডনিজনিত সমস্যা, প্রসাবের রাস্তায় ইনফেকশন, রক্তে ভাইরাস ও অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত শিশু সাগর। সন্তানের উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চান তারা।   

জানা যায়, গত বছরের দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু সাগর। এরপর বিভিন্ন মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে দিনাজপুর উত্তরা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পরে সে সুস্থ হলেও আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

পরে তাকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু রংপুর নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না পরিবারটির। পরে এলাকার মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য নিয়ে রংপুরে নেওয়া হয় এবং সেখানকার চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ ওঠে সাগর।

চলতি বছর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। ফুলে উঠেছে তার শরীর। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার চোখ। এবার আর সন্তানের চিকিৎসা চালাতে পারছে না বাবা-মা। কারণ পরিবারটি নিঃস্ব। সন্তানের এমন অসুস্থতা দেখে চিকিৎসার জন্য এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবারটি।


এদিকে শিশুটির পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে জেলার দুটি ফেসবুকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। একটি হলো ‘হামার ঠাকুরগাঁও’ এবং অপরটি ‘রাণীশংকৈল ফেসবুক ব্যবহারকারী’।

সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় ইতোমধ্যে শিশুটিকে নেওয়া হচ্ছে রংপুর মেডিকেল কলেজে। সেখানে শিশুটির চিকিৎসার সব খরচ বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন হেল্প হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক রংপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নওশাদ।

স্থানীয় ফাতেমা, কুলসুমসহ কয়েকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শিশুটিকে দেখছি এভাবেই কষ্টের জীবনযাপন করছে। তার বাবা-মা খুব অসহায়। তারা থাকেন অন্যের জমিতে। সেখানে সন্তানের সঠিক চিকিৎসা কী করে দেবে? 

শিশুটির মা জেসমিন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার ছেলে এভাবে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। এর আগে অনেকদিন মানুষের কাছে টাকা নিয়ে ছেলেটার চিকিৎসা করেছি। এখন আমার বাবার (সাগর) অবস্থা অনেক খারাপ। শরীর ফুলে গেছে। কী করে তাকে বাঁচাব? আমার ছেলেকে ঠিক করার জন্য আপনারা একটু এগিয়ে আসুন। আমি আমার ছেলেকে সুস্থ করতে চাই।

ফেসবুকভিত্তিক ‘রাণীশংকৈল ফেসবুক ব্যবহারকারী’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাডমিন ও রাণীশংকৈল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আকাশ বলেন, ‘হামার ঠাকুরগাঁও’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে আমি এই শিশু সাগরকে নিয়ে পোস্ট দেখি। এরপর আমি গ্রুপের সকলকে বলি শিশুটির সঠিক পরিচয় বের করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমাদের এই দুই গ্রুপের সবাই মিলে বিষয়টি নিয়ে সামাাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করি। এরপর রংপুর থেকে একজন শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে চান। পরে শিশুটিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

আনোয়ার হোসেন আকাশ বলেন, সেখানে শুধু শিশুটির চিকিৎসার জন্য যে খরচ হবে সেটি বহন করবেন হেল্প হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক রংপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নওশাদ। হাসপাতালে থাকা খাওয়া, ওষুধ কেনা সব কিছুই আমাদের গ্রুপের সদস্যরা দেখবেন।

শিশু সাগরকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে কথা মা জেসমিন বেগমের ০১৩০৪৮৩৮৩৪০ সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল। এছাড়া শিশুটির ভাই আলতাফুর রহমানের বিকাশ/নগদ ও রকেট নম্বরে (০১৭১৭২০০২২৩) সহায়তা করা যাবে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –