• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

দেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ দেখতে ঠাকুরগাঁওয়ে পর্যটকদের ভিড়

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য দর্শনীয় বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে আলোচিত ঐতিহ্যবাহী ২০০ বছরের পুরোনো সূর্যপুরী আমগাছ। ফলে এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছের স্বীকৃতি পেয়েছে।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্তবর্তী উপজেলা বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারী (নয়াপাড়া) গ্রামে বিশাল এ আমগাছটির অবস্থান। প্রায় ২ দশমিক ৫ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত সূর্যপুরী গাছটি। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট উঁচু এ গাছের পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও। গাছটির বিশালাকৃতির কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি বিশাল একটি ঝাউগাছ। কিন্তু কাছে গেলে ধারণা বদলে যায় সবার। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এই আমগাছ দেখার জন্য এখানে ভিড় জমায়।

স্থানীয়রা গাছটির সঠিক কোনো তথ্য দিতে না পারলেও তাদের মতে, সূর্যপুরী জাতের এত বড় আমগাছ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। তাই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন গাছটি একনজর দেখার জন্য। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে বেশি। জনপ্রতি দর্শনার্থীদের কাছে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা করে টিকিট। টিকিট বিক্রি থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে গাছটির পরিচর্যা করা হয়।

জানা যায়, ২০০ বছরের বেশি বয়স হলেও গাছটিতে আমের বাম্পার ফলন হয়। প্রতিবছর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণের বেশি আম পাওয়া যায় গাছটি থেকে। এগুলোর মূল্য বাজারের অন্যান্য আমের চেয়ে দ্বিগুণ। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই তা বিক্রি করা হয়। গাছটির বয়স প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি, এমনই ধারণা স্থানীয়দের।

এর বর্তমান মালিক স্থানীয় বাসিন্দা দুই ভাই সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। তবে তারাও বলতে পারেন না ঠিক কবে গাছটির চারা রোপণ করা হয়েছিল। তবে অনুমান করে তারা বলছেন, প্রায় ২০০ বছর হবে গাছটির বয়স।

দিনাজপুর থেকে পরিবারসহ গাছটি দেখতে এসেছেন জয়নুদ্দিন নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, অনেকের মুখে শুনেছি এই গাছটির কথা। আজ পরিবারসহ এলাম। আসলেই গাছটি অনেক সুন্দর। গাছটির ডালপালা অনেক বড়। অনেক ভালো লাগল গাছটি দেখে।

দেবীগঞ্জ থেকে আরিফ, সুমন ওমরসহ কয়েকজন এসেছেন দেশের সবচেয়ে বড় গাছটি দেখতে। তারা বলেন, অনেকের মুখেই শুনেছিলাম গাছটির কথা। তাই আজ বন্ধুরাসহ এসেছি। গাছটির ডালপালাগুলো অনেক বিস্তৃত। সবই ঠিক আছে, তবে চারপাশের পরিবেশ খুব একটা ভালো না। এখানে খাওয়ার মতো তেমন কোনো ভালো হোটেল নেই। না আছে বিশ্রাম নেওয়ার মতো তেমন কোনো কিছু। যদি এসব সংস্কার করা হয়, তাহলে হয়তো যারা দূর থেকে আসেন, তাদের জন্য অনেক ভালো হবে।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে গাছটি দেখতে এসেছেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, গাছটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় জঙ্গলে ঘেরা কিছু। কাছে এলে বোঝা যায় এটি আমগাছ। দৃশ্যটা অনেক সুন্দর। তবে গাছটির আশপাশ যদি সংস্কার করা হয়, যেমন এখানে বসার জন্য কোনো ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য খেলার কোনো ব্যবস্থা, এককথায় এটাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যদি গড়ে তোলা হতো, তাহলে মানুষ আরও বেশি করে আসবে।

সূর্যপুরী গাছের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, গাছটি আমার বাবার দাদার (প্রপিতামহ) লাগানো। এরপর থেকে আমাদের পরিবারের লোকজনই পরম্পরা এটাকে দেখাশোনা করে। ধীরে ধীরে গাছটি আকারে বাড়তে শুরু করে। গাছটির অদ্ভুত দিক হলো এর ডালগুলো। মূল কাণ্ড থেকে ডাল বেরিয়ে একটু ওপরে উঠে আবারও তা মাঠিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওপরে উঠেছে। দেখতে অনেকটা নদীর ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু।

গাছের মূল কাণ্ড থেকে বেরিয়েছে ২০টির মতো শাখা। গাছটির শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মতন। গাছের প্রতিটি ডালে চাইলে অনায়াসে হাঁটাচলা ও বসা যায়। এখানে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসেন। বিষয়টি আমাদেরও ভালো লাগে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, গাছটি আমাদের জেলার একটি ঐতিহ্য। দীর্ঘ বছরের পুরোনো গাছটি। আমরা এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর একটি বরাদ্দের আবেদন করেছি। আশা করছি, বরাদ্দ পেলে আমরা এখানকার সৌন্দর্যবর্ধন করতে পারব।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ। যেহেতু এটা পর্যটন সম্ভবনাময়, তাই আমরা একে কেন্দ্র করে সেখানে রেস্ট হাউস, মানুষের বসার জায়গাসহ দর্শনার্থীদের জন্য যা যা প্রয়োজন, সে কাজগুলো আমরা করব। যাতে ঐতিহ্যবাহী এ গাছটি সব সময় মানুষের নজরে থাকে।

যেভাবে যাবেন
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বালিয়াডাঙ্গীর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। আর বালিয়াডাঙ্গী থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে হানিফ, কর্ণফুলী, কেয়াসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঠাকুরগাঁ যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গী যেতে লোকাল বাস সার্ভিস আছে। লালমনিরহাট বা ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচলকারী ট্রেনেও যেতে পারেন। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। আর ট্রেনে ৬৫০ থেকে ১৬০০ টাকা। আর বিমানযোগে যেতে চাইলে ৩৬০০ টাকা সৈয়দপুর পর্যন্ত (টিকিটের দর ওঠানামা করে)। তারপর সৈয়দপুর থেকে বাসে ১০০ টাকা ভাড়া পড়বে। সবশেষ গাছটি দেখতে আপনাকে ২০ টাকায় টিকিট কাটতে হবে।

থাকবেন যেভাবে
ঠাকুরগাঁওয়ের নর্থ সার্কুলার রোডে হোটেলে প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহজালাল, হোটেল সালমা ইসলাম, হোটল সাকেদসহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া সরকারি সার্কিট হাউস ও জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসেও থাকার ব্যবস্থা আছে।

খাবেন যেখানে
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় জনপ্রিয় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। খাবারের মানভেদে একেক রেস্টুরেন্টে একেক মূল্য রাখা হয়। নিরিবিলি হোটেল, বাবুর হোটেল, আনসারি হোটেল, নিউ সুরুচি হোটেলসহ আরও অনেক আছে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের জনপ্রিয় খাবার শুঁটকি ও মসলার মিশ্রিত ‘সিদল ভর্তা’ এবং চালের গুঁড়ার পিঠার স্বদ নিতে পারবেন।

দর্শনীয় আরও যা আছে
বালিয়া মসজিদ, রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি, ঢোলার হাট মন্দির, হরিপুর রাজবাড়ি, ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ঠাকুরগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –