• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

এক হাজিরায় ৫০০ কিলোমিটার পাড়ি

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২২  

আবুল হাসেম। ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পীরগঞ্জ জোনাল আফিসের একজন আবাসিক গ্রাহক। বাড়ি পীরগঞ্জ পৌর শহরের মিত্রবাটি গ্রামে। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনা মহামারির কারণে বাড়ির বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেননি। এতে তার ৫ হাজার ২০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে। সে টাকা আদায় করতে ২০২১ সালে ঢাকায় পল্লী বিদ্যুতের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মামলা করে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

নোটিশ পাওয়ার পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের পীরগঞ্জ জোনাল অফিসে মামলায় দাবিকৃত বকেয়া ৫ হাজার ৫০৭ টাকা পরিশোধ করেন আবুল হাসেম। এরপরও মামলা থেকে অব্যাহতি পাননি। ৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাকে হাজিরা দিতে যেতে হয়েছে ঢাকার স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ।

এরই মধ্যে মামলার হাজিরা দিতে তিনবার ঢাকায় যান আবুল হাসেম। দুইবার আদালত বসেনি। একবার বিচারক ছিলেন না। এদিকে উকিল নিয়োগসহ যাওয়া-আসায় এখন পর্যন্ত তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুতের আদালত না থাকায় হাসেমের মতো এ অঞ্চলের পল্লী বিদ্যুতের শতাধিক খেলাপী গ্রাহককে ঢাকায় গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে তারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ, ভোগ করতে হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের পল্লীবিদ্যুৎ বিল খেলাপীসহ বিদ্যুৎ চুরি ও পল্লী বিদ্যুতের অন্যান্য অপরাধ বিচারের জন্য ঢাকায় ২টি আদালত ছাড়া অন্য কোনো জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুতের আদালত নেই। ঐ দুই আদালতেই সারাদেশের খেলাপী গ্রাহকদের মামলায় হাজিরা দিতে হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, হাজিরা দিতে গিয়ে অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়, প্রতারিত হতে হয় অনেককে। নাজেহাল হতে হয় অর্থনৈতিকভাবে।

তারা আরো জানান, খেলাপী গ্রাহকরা বকেয়া পরিশোধ করলেই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কথা। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলাতির কারণে বকেয়া পরিশোধ করার পরও বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে তাদের। হাজিরা দিতে যেতে হচ্ছে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার দূরে।

ভুক্তভোগী আবুল হাসেম বলেন, ৫ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি। এরপরও দায়মুক্ত হতে পারছি না। হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আশপাশে পল্লী বিদ্যুতের আদালত থাকলে এমন হতো না।

পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম বলেন, জেলা বা বিভাগ পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুতের কোর্ট না থাকায় মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। জনগণের সুবিধার্থে জেলায় জেলায় এ কোর্ট থাকা দরকার।

ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের আইনজীবী আবু সায়েম বলেন, আইনি সেবা সহজতর করতে পল্লী বিদ্যুত সমিতিগুলো নিজ নিজ এরিয়ার মধ্যে আদালত থাকা একান্ত জরুরি।

ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পীরগঞ্জ জোনাল আফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক বাচ্চু মিয়া বলেন, আমার অফিসের অধীনে ঢাকায় পল্লী বিদ্যুত সমিতির আদালতে বেশ কিছু খেলাপী গ্রাহকের নামে মামলা আছে। তাদের হাজিরা দিতে সেখানেই যেতে হয়। এটা সত্য। আমাদের করার কিছুই নেই। মামলার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো গাফিলাতি নেই।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –