• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

বালীয়াডাঙ্গীতে ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণ: মেয়ে মেডিকেলে

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২২  

অভাবের কারণে বড় মেয়েকে পড়াতে পারেননি আফতাবর রহমান। তাই স্কুলের গণ্ডি না পেরুতেই বিয়ে দেন তাকে ৷ সন্তানদের নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেও কিছু করতে পারেননি তিনি ৷ কোন উপায়ও ছিল না তার । কারণ সম্বল হিসেবে অল্প একটু জমি আর একটি ভ্যান ৷ সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের একমাত্র আয়ের ভরসা আফতাবরের ভ্যানটি ৷ তবে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি তিনি । বড় মেয়েকে পড়াতে না পারলেও দৃঢ় সংকল্প করেন বাকি সন্তানগুলোকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার ৷ নিজের সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নেন তিনি ৷

ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাবর রহমান ৷ স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সাত সদস্যদের সংসার তার। পৈতৃক ভিটেমাটি, একটি ভ্যান, আর অল্প একটু চাষাবাদের জমি ছাড়া কিছুই নেই তার ৷

ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হতো তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি খরচ করতো সন্তানের পড়াশোনায়। নিজের চাষের জমি বিক্রি করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ভ্যান আর ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই তার। ভ্যান চালিয়ে উপার্জান করে সংসারের ভরণ পোষণের পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন ৷ ছেলে মুন্নাকে ভর্তি করিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর সম্প্রতি মেডিকেল চান্স পেয়েছেন দ্বিতীয় মেয়ে আলপনা আক্তার। তিনি ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। আর ছোট মেয়ে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে ৷

ভ্যান চালক আফতাবরের সন্তানদের এমন সফলতায় পরিবারসহ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা ৷ এ নিয়ে এলাকাজুড়ে চলছে একটি আনন্দঘন পরিবেশ ৷

আলপনার সহপাঠি রুনা আক্তার বলেন, আলপনা আমার বান্ধবী ও প্রতিবেশী ৷ ছোটবেলা থেকেই একসাথে পথচলা আমাদের । একসাথে স্কুল আর কলেজ৷ ক্লাসে অনেক মেধাবী ছিল সে। আমাদের বন্ধু বান্ধবীদের চেয়ে সে ছিল ব্যতিক্রম ৷ আর পড়াশোনায় ছিল অনেক মনযোগী। তার এই সফলতায় আমরা সকলে খুশি। আশা করছি সে মানবিক ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারবে।

স্থানীয় প্রতিবেশী রুহুল কবির বলেন, এখন আমাদের ভাতিজি আমাদের গর্বের বিষয়। আমাদের এলাকায় অনেক দরিদ্র মানুষ বসবাস করেন। সে ডাক্তার হলে আমাদের এলাকার জন্য ভাল কিছু করতে পারবে এই প্রত্যাশায় রইল ৷

মেডিকেলে চান্সপ্রাপ্ত আলপনা আক্তার বলেন, আমার এই ক্ষুদ্র সফলতায় আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যে কথাটি না বললেই নয়। যার অনুপ্রেরণায় আমার এ সফলতা তিনি হলেন আমার বাবা। যিনি সারাদিন ভ্যান চালিয়ে রোজগার করে পরিবার চালান ৷ আর আমাকে স্বপ্ন দেখান ডাক্তার হওয়ার ৷ আমাদের পরিবারটি অনেক কষ্ট করে চলে কিন্তু এটি আমার বাবা আমাকে এক সেকেন্ডের জন্যও বুঝতে দেইনি। আমরা বুঝতে পারলেও আব্বা কোনভাবে বুঝতে দিতেন না অভাব ৷ বাবার পাশাপাশি আমার মা অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমার কেমন ফলাফল হবে এটা আমার চেয়ে আমার মা আগেই বলে দিতে পারতেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন ৷ আমি প্রথমে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছিলাম ৷ কিন্তু বিদ্যালয়ের স্যারেরা আমাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন ৷ পাশাপাশি অনুপ্রেরণা দেন যে আমি পারব ৷ সেখান থেকে আমার স্বপ্নটি আরও বেগবান হয়। আমার এই ফলাফলে আমার বাবা মা যে খুশি হয়েছে এটাই আমার বড় স্বার্থকতা।

আলপনার মা মাজেদা খাতুন বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বপ্ন দেখেছিলাম মেয়েকে ডাক্তার বানাব ৷ আজকে তার যাত্রা শুরু হল।

আলপনার বাবা আফতাবর রহমান বলেন, টাকার অভাবে বড় মেয়েকে পড়াতে পারিনি ৷ পরে স্বপ্ন দেখেছি বাকি সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করব ৷ একদিন আমি ভ্যান চালিয়ে রাতে বাসায় আসলাম ৷ খাওয়ার সময় ছেলেটা বললো বাবা দোয়া করিও আমি যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ সে এখন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে বাংলায় চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছে ৷ সেভাবে আমার মেয়েকেও আমি কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি ৷ আমার মেয়ে বললো সে টাকা পয়সার ঘাটতি বুঝতে পারেনি ৷ আমি সারাদিন ভ্যান চালিয়ে কষ্ট করতাম শুধুমাত্র তাদের জন্য। আমার ২৫ শতক আবাদি জমি ছিল। ছেলেকে ভর্তি করার জন্য ৫ শতক বিক্রি করতে হয়। পরে ছেলে ও মেয়েকে পড়াশোনা করানোর জন্য বাকি ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয় ৷ এখন ভ্যান আর ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই আমার ৷ তারপরেও আজকে আমি অনেক খুশি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তারি পড়ানো অনেক খরচ। আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্যমত। তবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয় তাহলে আমার কষ্টটা কম হবে ৷

সরকারি সুযোগ সুবিধা আলপনা পাবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, যদি আলপনার বাবা চান তাহলে তার পড়াশোনার খরচের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে উপজেলা প্রশাসন ৷

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –