• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়া ফেলেছে মাসুদের ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২২  

ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়া ফেলেছে মাসুদের ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল                    
মাসুদ রানা। কাজ করতেন একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ওটি বয় হিসেবে। ক্লিনিকটির শুরু থেকে প্রায় বিশ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। করোনায় হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। অসময়ে চাকরি হারিয়ে দিকবিদিক শূন্য হয়ে পড়ে মাসুদের জীবন। একদিকে করোনার প্রকোপ আরেকদিকে চাকরি হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন তিনি ও তার পরিবার। কোন কাজ ছাড়াই বাড়িতে বসে কাটিয়ে দেন দুই মাস।

অভাবের সংসারে মাসে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসারের ভরণপোষণ আর সন্তানদের পড়াশোনা করাতে খরচ হয়ে যেত। অধিক পরিমাণ টাকা জমানোর সুযোগ ছিল না। তবে দীর্ঘ সময় চাকরি করায় কিছু টাকা জমিয়ে ছিলেন তিনি। সংসারের খরচের টাকা জোগাড়ের জন্য নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বসে না থেকে জমানো সব টাকা দিয়ে একটি অটো ক্রয় করে সেটি চালানো শুরু করেন। তবে বিধি বাম। এক মাস যেতে না যেতে অটো গাড়িটি চুরি হয়ে যায়। অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও সেটিকে আর পাওয়া সম্ভব হয়নি।

একদিকে পরিবারের ভরণপোষণ, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ অপরদিকে চাকরি ও শেষ সম্বল হারিয়ে নিরূপায় হয়ে পড়েন মাসুদ রানা। এভাবে কতদিন আর পরিবারের সদস্যদের মুখে দেখে থাকা যায়। যতটুকু চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন তা দিয়ে ছোট একটি চেয়ার ও টেবিলে ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল বড় মাঠে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যার ঠিক আগ থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে তার এ হাসপাতালের কাজ। প্রেসার মাপা, ওজন মাপা ও প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যায় তার এই ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে।

দোকান নিয়ে বা টাকা ইনভেস্ট করে কোন কিছু শুরু করার মত অবস্থা না থাকায় জেলা স্কুল বড় মাঠে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান মাসুদ রানা। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার কালিবাড়ির বাসিন্দা তিনি। পারিবারিক জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি। সন্তানেরা দুজনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

মাসুদ রানা বলেন, ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় ইউসুফ হাসপাতালের শুরু থেকে আমি চাকরি করে আসছিলাম। করোনায় ব্যবসা করতে না পেরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। বিশ বছর ধরে ডাক্তার আর রোগীদের সাথে আমার চলাফেরা। আলাদা কোন কাজ তেমন পারি না। মাসে যা বেতন পেতাম তা দিয়ে বাড়িভাড়া, সংসারের খরচ আর সন্তানদের পিছনে খরচ হয়ে যেত। তাও কষ্ট করে একটা অটো কিনেছিলাম। সেটাও চুরি হয়ে যায়। আমি একেবার নিঃস্ব হয়ে যাই। তবে বসে তো আর থাকা যায় না। কোন দোকান নিতে গেলে তার সিকিউরিটিসহ অনেক টাকার হিসাব-নিকাশ। তাই দোকান নিয়ে শুরু করা আপাতত স্বপ্নের মতন। মেয়েটার স্কুলের বেতন দিতে পারিনি স্কুল খোলার পর। বাড়িতে ঠিকমত খরচ করে দিতে পারি না। দিনেরবেলা পরিচিত লোকজন মোবাইল করে যেতে বলে বাড়িতে চিকিৎসার জন্য সেগুলোতে যাই। আর সন্ধ্যার আগে মাঠে বসি রাত আটটা পর্যন্ত থাকি।

আমার এখানে প্রেসার, ওজন ও জ্বর মাপা যায়। মূলত যারা মাঠে হাঁটেন, দৌড়ান তারা ওজন ও প্রেসার বেশি মাপেন। আলহামদুলিল্লাহ এখান থেকে প্রতিদিন তিনশো-চারশো টাকার মত আয় হয়। আপাতত এভাবেই সংসার চালিয়ে নিতে হচ্ছে। দেখা যাক আল্লাহ আবার কবে কিছু করার সুযোগ করে দেন।

ওজন মাপতে আসা মোখলেছুর রহমান বলেন, শারীরিক ভাবে ফিট থাকার জন্য বিকালে আমি মাঠে প্রতিদিন হাঁটার জন্য আসি। আর শরীরের ওজন আয়ত্তে রাখা অতীব জরুরি। তবে ইচ্ছে করে ওজন মাপতে যাওয়া হয় না। এখানে উনি যে ওজন মাপেন এটা ভালো উদ্যোগ বলে আমি মনে করছি। এটার মাধ্যমে মাঠে আসা অনেকে উপকৃত হবেন।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে মাসুদ অনেক কষ্ট করে সংসারের খরচ বহন করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সহযোগিতা করেছি আগামীতেও করব ইনশাআল্লাহ।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –