• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসী ছেলের লাশ দেশে আনতে মা-বাবার আকুতি

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

‘মা টাকার জন্য চিন্তা করিও না। বেতন পাইলেই টাকা পাঠায় দিম। কিস্তির টাকার তাহানে চিন্তা করিসনা। বেতন পাইলেই কিস্তির টাকাসহ পাঠায় দিম। মহাজন আর বকাবকি করিবা পারবেনি মা। 

এভাবেই কান্না করতে করতে বলছিলেন ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সুলতানের মা। 

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার  আমজানখোর ইউপির কাশিবাড়ী গ্রামের মো. মিঠুর ছেলে সুলতান। ছয় মাস আগে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ওমানে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন। স্বপ্ন ছিল উপার্জন করে পরিবারকে সাহায্য করবে। দুই মাস আগে কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা পরিবারে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। ওমানে একটি হাসপাতালের আইসিইউতে আট দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত রোববার বিকেলে তার মৃত্যু হয়।   

ওমান প্রবাসী সুলতানের ছোটবেলার বন্ধু সামিউল বলেন, গত রোববার ওমানের ইবরি এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় একটি প্রাইভেটকার সুলতান আলীকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুলতান। 

সুলতান আলীর বাবা মিঠু বলেন, সরকারি ভিসায় ছয় মাস আগে এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে ওমান পাঠাই। কাজ শিখে না যাওয়ার কারণে শুরুতে কাজ পায়নি। দুই মাস আগে কাজে যোগ দেয়। গত রোববার প্রচণ্ড গরমে কাজের ফাঁকে কোমল পানীয় কিনতে ইবরি এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিল। এমন সময় প্রাইভেটকার ধাক্কা দিলে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়। এরপর থেকে আইসিইউতে ছিলেন। ঋণের টাকার কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এখন ছেলের লাশ কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। ছেলের লাশ নিয়ে আসতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

নিহত সুলতানের চাচা তোরাব আলী বলেন,  আমার ভাতিজা এসএসি পাশ করার পর বিদেশে পাঠানোর জন্য ব্রাক থেকে কিছু টাকা লোন নেয়। বিদেশে পাঠালেও ওখানে যাবার পর ৫ মাস কোনো কাজ পাই নি। ২ মাস ধরে সে  কাজ করে। ২ মাসের  কাজের বেতন এখন পর্যন্ত পাই নি। তার কিছুদিন পর ব্রাক থেকে চাপ আসলো যে টাকা পরিশোধ করার। তখন মিঠুন তার ছেলেকে টাকার কথা বলে। সেই চিন্তা করে কাজে যাচ্ছিলো সে।  সেখানে সে গাড়ির নিচে পড়ে  ডান পা ভেঙে গেছে এবং মাথায় আঘাত পায়। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আকালু বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে ঋণের টাকায় বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তারা। ছয় মাসে কোনো টাকাই দেশে পাঠাতে পারেননি সুলতান। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় পুরো পরিবার বিপাকে পড়েছে। সুলতানের লাশ ফেরানোর জন্য যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি বেশ বেদনাময়। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে৷

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –