• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত শেখ হাসিনা

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২১  

ড. দেলোয়ার হোসেন
২৫ আগস্ট বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ৪ বছর পূর্তি হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এক অনন্যসাধারণ মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবর্তনে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখেনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।  যেভাবে  আর্ন্তজাতিব সংগঠনের  বা সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখার কথা ছিল সেভাবে তাদের কোন ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি। গত চার বছরে  তাই সঠিক আলোর মূখ দেখে নি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

রোহিঙ্গা সংকটের আজ চার বছর।কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য কূটনৈতিকভাবে এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুটি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম ভোটটি অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর, অপরটি ৩১ ডিসেম্বর। এ ভোটগ্রহণে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিংবা জাতিসংঘ থেকে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতির বিষয় উঠে এসেছে।

২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথমবার যখন ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবে ভোটাভুটি হয়, তখন ১৩২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে এবং ৯টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। ৩১টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।

পরবর্তীকালে আমরা দেখলাম, ৩১ ডিসেম্বর যখন ভোটগ্রহণ করা হয়, তখন যে দেশগুলো আগে ভোটদানে বিরত ছিল, তাদের মধ্যে ৯টি দেশ এবার বাংলাদেশের বা রোহিঙ্গাদের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এটি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।

জাতিসংঘে উত্থাপিত এবারের প্রস্তাবটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সেখানে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ রায়ের রেফারেন্স নিয়ে মিয়ানমারের ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন, যারা মিয়ানমারে যেতে চেয়েছিল, তাদেরকে অসহযোগিতার বিষয়টিও উঠে এসেছে এতে। সামগ্রিকভাবে রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে দেশটির সরকারের আচরণ এবং তাদের অসহযোগিতার ব্যাপারে এক ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো অবশ্যই আন্তর্জাতিক বা কূটনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

মিয়ানমার সরকার দেশের ভেতরে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর যে ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, সে বিষয়টি বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরও দেশটি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং রাখাইনে তারা বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে, বলা যেতে পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে, এক ধরনের স্বস্তির মধ্যে আছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুপালংসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ অবস্থা থেকে তাদের পরিত্রাণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে।

বিশেষ করে তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের যে সমস্যা, তার সমাধানে ভাসানচর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভাসানচর নিয়ে কোনো কোনো মহলের এক ধরনের আপত্তি ছিল।

এখন তারা বিষয়টি অনুধাবন করে তাদের আপত্তির জায়গা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে। হয়তো ভবিষ্যতে এটাকে আরও এগিয়ে নেবে, সাধুবাদ জানাবে। কারণ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দুটো দল ইতোমধ্যে গিয়েছে এবং তারা তাদের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে যে পরিমাণ চাপ মিয়ানমারের ওপর দেওয়া উচিত, সেটি এখনও আসেনি।

চাপ হয়তো আছে, তবে সেটা আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে আরও বেশি সক্রিয় করাতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ব্যাপারে তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করাতে হবে।
এটা স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গা সংকট একটা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। সুতরাং বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের একটি জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

এত বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন একটি অঞ্চলে অবস্থান করে, তখন ওই অঞ্চলের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করে এবং এটাই স্বাভাবিক। অন্য একটি দেশের বিশাল এই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাজনিত হুমকি তৈরি করছে, পরিবেশের জন্য হুমকি তৈরি করছে এবং বলা যায় সেটি ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে।

সুতরাং বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা একটা বড় ধরনের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুধাবন করতে হবে।
তবে এটি ঠিক, রোহিঙ্গা সমস্যার মূল সমাধান রয়েছে মিয়ানমার সরকারের হাতে। মিয়ানমারে ইতোমধ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে নির্বাচনে অং সান সু চি ব্যাপক ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তারা হয়তো একটি সরকার গঠন করবেন। মিয়ানমারের যে সংবিধান এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে আমরা লক্ষ করছি, সেখানকার সামরিক বাহিনীই মূলত ক্ষমতার চাবিকাঠি। ফলে নির্বাচনের কারণে যে পরিবর্তন হওয়ার কথা, সেটা হয়তো সহজে হবে না।

সুতরাং আন্তর্জাতিক যে চাপ সেটা এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের যে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ওপর গণহত্যা, জাতিগত নিধনের মতো অপরাধ মিয়ানমার সরকার সংঘটিত করেছে, তা আন্তর্জাতিক আদালত দ্বারাও প্রমাণিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে চীন ও ভারত সম্প্রতি বলেছে, মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তারা কথা বলবে।

মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের রাজি করানোর বিষয়ে তারা চেষ্টা করবে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য আশাব্যঞ্জক। তবে বাস্তবে তারা কতটা আন্তরিক হবে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।

কারণ তাদের যে পলিসি, সেটা এখনও অনেকটাই মিয়ানমার সরকারের পক্ষে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি মিয়ানমারের পক্ষেই তারা ভোট দিচ্ছে।

যেমন, গত ৩১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে যে নির্বাচনটি হলো সেখানেও চীন মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। ভারত ভোটদানে বিরত থেকেছে, যা শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারকে সমর্থন করারই শামিল।

তবে ভারত, চীন ও জাপান এ রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলায় আন্তর্জাতিক আদালত থেকে যে চাপটি আছে, সেটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বারবার আলোচনায় আসছে। সেদিক থেকে মিয়ানমার একটা চাপের মধ্যে আছে।

এ পটভূমিতে আগামী ১৯ জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে ঢাকায়। এটিকে আমরা এ ইস্যুতে এক ধরনের কূটনৈতিক অগ্রগতি বলতে পারি। এ আলোচনা সফল হলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা আশার আলো দেখতে পাব। যদিও অতীতে এ রকম প্রয়াস থেকে কোনো সফলতা আসেনি, তারপরও আমরা আশাবাদী হতে চাই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বাইডেন প্রশাসন জানুয়ারির ২০ তারিখে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। যদিও বর্তমানে মার্কিন রাজনীতি অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকায় বাইডেন প্রশাসনকে কিছুদিন অভ্যন্তরীণ বিষয়েই জোর দিতে হবে, তারপরও আমার মনে হয় রোহিঙ্গা সমস্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। চীন, ভারত ও রাশিয়া মিয়ানমারের ওপর সেভাবে চাপ সৃষ্টি করছে না।

অপরদিকে গত ৪ বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলছে এবং মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। অর্থাৎ তারা একদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কথা বলছে, অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য বৃদ্ধি করছে।

অনেকটা চোরকে চুরি করা এবং গৃহস্থকে সজাগ থাকতে বলার মতো অবস্থা। বাস্তব অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে সমাধান আসবে কিভাবে? কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে মিয়ানমার এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা বিশ্ব যতই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কথা বলুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তারা মিয়ানমারকে তাদের পাশে রাখার চেষ্টা করছে।

এভাবে মিয়ানমারের যে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, সেটাকে তারা এগিয়ে নিচ্ছে। এভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলো এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা স্ববিরোধী হয়ে উঠেছে। আবার রোহিঙ্গাদের যখন ভাসানচরে নিয়ে একটা নিশ্চিত নিরাপদ জীবন দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন সেটা নিয়েও একটা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।

ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যারা রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলছে, তারা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে তা বলছে সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। আবার চীন, রাশিয়ার মতো দেশগুলো শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় আনছে না। তারা শুধু মিয়ানমারের স্বার্থের কথাই চিন্তা করছে। সুতরাং উভয় দিক থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গারা এক ধরনের বঞ্চিত, অবহেলিত, উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশকে এ রকম একটি কঠিন পরিস্থিতি একাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের পাশে কেউই এগিয়ে আসছে না। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাহলে বাংলাদেশ একা কেন এর দায় নেবে?

বাংলাদেশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কিভাবে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় এবং এ লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা যায়। তবে এ প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্ববিরোধী আচরণের কারণে।
অনেকে ভাসানচর নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে, সেটাও এক ধরনের স্ববিরোধী অবস্থান। অপরদিকে চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো অনেকটা অসংবেদনশীল কিংবা এক ধরনের উদাসীন অবস্থানে আছে। তারা এখনও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যে গণহত্যা, জাতিগত নিধন প্রক্রিয়া, সেটিকে যথেষ্ট আমলে নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করছে না। ফলে এ বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কথাটি বারবার বলে আসছেন সেটা হলো, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি একটি আঞ্চলিক সংকটে রূপান্তরিত হবে। যদিও এ সংকটের সম্পূর্ণ যে চাপ বা চ্যালেঞ্জ সেটি বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে, কিন্তু সেটা খুব বেশিদিন নয়। যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই এ সংকট পুরো অঞ্চলকে প্রভাবিত করবে।

তাই রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ আরও শক্তিশালী করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্বহীন করে রেখেছিল। বাইডেন প্রশাসনকে ক্ষমতায় এসে সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।

তা না হলে ১১ লাখ রোহিঙ্গা, যারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এটি মানবতার জন্য, আঞ্চলিক শান্তির জন্য, সর্বোপরি বিশ্ব শান্তির জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –