• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে হাইস্পিড রেল

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১  

এম এ মোনায়েম

প্রতিনিয়ত নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উন্নত দেশে হাইস্পিড রেল (এইচএসআর) চালুর মধ্য দিয়ে পরিবহনব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশ্বে এক অভাবনীয় রূপান্তর সাধিত হয়েছে। তবে মাত্র এক শতাব্দী আগেও কাউকে যদি বলা হতো, উড়োজাহাজ ছাড়াই মানুষের পক্ষে ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার যাত্রা করা সম্ভব—নিঃসন্দেহে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। কিন্তু সময় বদলেছে, আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে গিয়েছে আধুনিক বিশ্বের জীবনাচারের ধ্যান-ধারণা।

হাইস্পিড রেলের জন্মস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাপানকে। জাপান ১৯৬৪ সালে সর্বপ্রথম উচ্চগতিসম্পন্ন রেল চালু করে, যা ‘বুলেট ট্রেন’ নামেই ব্যাপকভাবে পরিচিত। সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোয় জাপানি হাইস্পিড ট্রেনগুলো দিনে সাধারণত চার লাখ ২০ হাজারেরও বেশি যাত্রী বহন করে থাকে। পরবর্তীকালে ইউরোপের অনেক দেশেও একই ধরনের রেলব্যবস্থা গড়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন তাদের উন্নত এবং অধিক কার্যকর হাইস্পিড রেল অবকাঠামোকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং শীর্ষস্থানীয় দক্ষতার মাধ্যমে সমন্বিত করে গোটা বিশ্বের চোখে এক প্রশংসনীয় অবস্থান অর্জন করেছে।

উন্নত দেশগুলো ক্রমেই উচ্চগতির রেলব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যার কারণ হলো এটি পরিবহন সুবিধা, শক্তি সঞ্চয় (এনার্জি সেভিং) সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি থেকে আরম্ভ করে পরিবেশসংক্রান্ত নানা সুবিধা প্রদানসহ অসংখ্য সম্ভাবনার সঞ্চার করে, যার সবই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সক্ষম।

যেকোনো দেশকে তিনটি প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করতে পারে হাইস্পিড রেল নেটওয়ার্ক। প্রথমত, এটি একই সময়ে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের একটি দ্রুত এবং আরামদায়ক মাধ্যম, যা পাশাপাশি যাত্রীদের সময় এবং অর্থও সাশ্রয় করতে সাহায্য করে। পরিবহনের এমন তাত্ক্ষণিক একটি মাধ্যম দেশে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। দ্বিতীয়ত, এটি চাকরির বাজারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। কেননা এটি বেকার শ্রমশক্তির জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, এমন একটি উচ্চগতিসম্পন্ন রেলব্যবস্থা দেশের শহরগুলোর মধ্যে উন্নত আন্তঃসংযোগ তৈরির সম্ভাবনা রাখে, যার ফলস্বরূপ ছোট ছোট শহরগুলো বড় শহরগুলোর সঙ্গে আরো ভালোভাবে সংযুক্ত হতে পারে, যা নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসে।

এটি একটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক দিক যে বাংলাদেশ হাইস্পিড রেল নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর সমূহ সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং দেশে হাইস্পিড রেল উন্নয়নের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু রেল প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড রেল সংযোগ প্রকল্প। প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুসারে হাইস্পিড ট্রেন চালু করা গেলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী মাত্র ৭৩ মিনিটেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে পারবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডসহ (সিআরইসি) দুটি চীনা প্রতিষ্ঠান এবং প্রভাইডাস ইনভেস্টমেন্টস নামে একটি অস্ট্রেলিয়ান ফার্ম পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটির নির্মাণ, পরিচালনা এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় আগ্রহ দেখিয়েছে।

এই হাইস্পিড রেল সংযোগটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে; এ ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি দ্রুতগতির যোগাযোগব্যবস্থা এখন দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির গতিকেই বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ এটি শুধু মানুষের সময়ই সাশ্রয় করবে না, বরং দেশের দুটি প্রধান শহর ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরো ফলপ্রসূ উপায়ে বাস্তবায়ন করতেও সহায়তা করবে।

করোনার বৈশ্বিক মহামারির কারণে বর্তমানে এই রেল সংযোগ প্রকল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ-সুবিধাদি বিবেচনায় রেখে কোন কম্পানিকে নির্মাণের অংশীদার করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশের এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের সময়ানুগ সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে প্রকল্পটি থেকে দেশের মানুষের কল্যাণ ও জীবন-জীবিকার উন্নয়ন।

লেখক : আর্থওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ইনচার্জ, মাওয়া ভাঙ্গা বিভাগ, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –