• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৃঢ়, অবিচল ও লড়াকু শেখ হাসিনা 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

শেখ হাসিনা মানেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাওয়া উজ্জ্বল এক বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক মুক্তিতে, মানবিক ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি অবিচল, দৃঢ় এবং লড়াকু।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত বাঙালিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। দেশ পুনর্গঠনের জন্য যখন নিরলসভাবে বঙ্গবন্ধু কাজ করে যাচ্ছিলেন, তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল শূন্যের কোঠায়, বৈদেশিক সাহায্য আসাও শুরু হয়নি; এমনি এক পরিস্থিতিতে দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা আর শিক্ষার ব্যবস্থা করা ছিল একটি দুরূহ কাজ।

বিশ্বের অনেক অর্থনীতিবিদের ধারণা ছিল, রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশটি কখনোই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, এ দেশের কর্মজীবী মানুষের হাতগুলো কাজে লাগিয়ে তিনি এ দেশকে ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত করতে পারবেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী কুচক্রী মহল ১৯৭৫ সালে তাঁকে হত্যা করে এই অগ্রযাত্রা সমূলে উৎপাটনের অপচেষ্টা চালায় এবং দেশের উন্নয়নের গতি থামিয়ে দেয়।

ইতিহাসের রক্তবীজে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেই ১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তবে তাঁর এই আগমন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। পথে পথে ছড়ানো ছিল সংকট ও মৃত্যুর ঝুঁকি।

পিতার উত্তরসূরি হয়ে দেশ ও জনগণের শান্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিগত এক দশকে ৬ শতাংশের অধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘের সূচক অনুযায়ী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। কোভিড-১৯-এর কারণে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা মন্থর হলেও বাংলাদেশ এখনো চারটি দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে, যা অনেক উন্নত দেশের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনে ‘লিডারশিপ স্ট্র্যাটেজি’ শিরোনামে এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে করোনা মোকাবিলায় সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
তাছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধনম গেব্রিয়েসুস কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গৃহীত কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতির গতিধারা বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী জিডিপির (এউচ) বিচারে আজ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতি। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আইএমএফের প্রাক্কলনমতে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৫৬১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশকে আরো শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত করবে।

করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের বহু উন্নত দেশ সংকোচনমূলক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ সম্প্রসারণমূলক নীতি গ্রহণ করে বিদ্যমান অর্থবছর পর্যন্ত ২৮টি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা মোট জাতীয় আয়ের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা ক্রয়, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন আর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে বিনা মূল্যে টিকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন এবং পণ্য সরবরাহব্যবস্থাও সচল রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। ফলে বিশ্বের বহু দেশে নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতিও সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে (মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ)।

২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ দশমিক ১৮ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চা, পাট, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়ত খাদ্য এবং কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, শিপ বিল্ডিং, ওষুধ, আইসিটি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস, প্লাস্টিকসহ প্রায় ৭০৫টি পণ্য আজ রপ্তানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, প্রবাসী আয় ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে, যা অর্থনীতিকে একটা শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সহায়ক হবে। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে টাকার তুলনায় ডলারের বিনিময় হার শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হয়, যা রপ্তানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

কোভিড-১৯-এর কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগের গতি কিছুটা হ্রাস পেলেও বর্তমানে ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২১টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে, যা দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করছে।

দেশে শিল্প, কৃষি ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিদ্যুতের অপরিসীম গুরুত্ব বিবেচনা করে বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

একই সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ এবং অন্যান্য মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, যা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিতে সহায়ক হচ্ছে।

ব্যাপক জনসংখ্যা, জমির স্বল্পতা, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে ক্রমাগত অগ্রগতি সাধন করে চলেছে, যা বিগত এক দশকে বিশেষভাবে বেগবান হয়েছে। এর কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, সামাজিক উন্নয়নকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, শিক্ষা বৃত্তি, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের প্রসার, কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিতকরণ, সমাজ বিবর্তন আর সামাজিক বৈষম্য রোধে বৈপ্লবিক ভূমিকা রেখেছে।
পিতার প্রতি অঙ্গীকার এবং দেশপ্রেম থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী শিক্ষা, জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসা, দূরদর্শী রাজনৈতিক অঙ্গীকার, মুক্তিযুদ্ধের অদম্য প্রেরণা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কর্মের প্রয়াস নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে দেয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি এ জন্য বারবার প্রশংসিত হয়েছেন এবং পুরস্কৃত হয়েছেন।

তার স্বীকৃতিস্বরূপ অতি সম্প্রতি জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারে’ ভূষিত করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতায় দেশ আজ ক্রমান্বয়ে উন্নত থেকে উন্নততর দিকে প্রবাহমান।

তাই আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ করার জন্য তিনি যে পথনকশা প্রণয়ন করেছেন, তাঁর এই উদ্যোগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যার যার অবস্থান থেকে দেশ গড়ার কাজে সর্বস্তরের মানুষ সম্পৃক্ত হলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব।

লেখক: সাজ্জাদুল হাসান
সাবেক সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –