• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

অনলাইনে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ভারত-চীন

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২০  

চলতি বছরের জুন মাসে ভারত এবং চীনের মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষে প্রায় ২০জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। এরপর থেকেই দুই দেশের সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা চলছে। এই উত্তেজনা কমানো এবং সংঘাত এড়ানোর জন্য দুই দেশ এখন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুইদিক থেকেই এই উত্তেজনা এবং সংঘাত সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিবিসির ‘রিয়েলিটি চেকের’ শ্রুতি মেনন ও উপাসানা ভাট দুই দেশের এ ধরণের কিছু মিথ্যা তথ্য এবং দাবি যাচাই করে দেখেছেন।

চীনের সেনাদের বিভ্রান্তিকর ভিডিও:

এক ভিডিওতে দেখা গেছে, চীনের সেনাদের সীমান্তে পাঠানোর পর কাঁদছে তারা। তবে বিভ্রান্তিকর এই ভিডিওটিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিছু মানুষ ওই ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করেছেন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে তাইওয়ানের কিছু গণমাধ্যমের নজরে পড়ে ভিডিওটি। তারা এটি প্রচার করে। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয় ভারতে। তাদের সীমান্তে পাঠানো হয়েছে বলেই তারা কাঁদছে বলে চীনা সেনাদের উপহাস করতে থাকে ভারতীয় লোকজন।

এখন পর্যন্ত ভিডিওটি অনলাইনে ৩ লাখেরও বেশি দেখা হয়েছে। ভারতে জি নিউজ থেকে শুরু করে বড় বড় গণমাধ্যমে এটি প্রচারিত হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চীনা সেনারা একটি মিনিবাসে চড়ে যাচ্ছে। তারা ম্যান্ডারিন ভাষার একটি জনপ্রিয় সামরিক গান গাইছে। মূলত বাড়ির জন্য মন কাঁদছে এরকম একটি বিষয়ে এই গান। লাল ও হলুদ রঙের যে উত্তরীয় সেনারা পড়ে আছে তাতে লেখা সামরিক বাহিনীতে যোগ দাও মর্যাদার সঙ্গে।

বিবিসির রিয়েলিটি চেক এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যা দেখে বলা যাবে যে ওইসব সেনাদের ভারত সীমান্তে পাঠানো হচ্ছিলো। চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ওই সেনারা সেনাবাহিনিতে নতুন যোগ দিয়েছে। এরা আনহুই প্রদেশের ইয়াংযু জেলার ফাইয়াং শহরের লোক। পরিবারের সদস্যদের বিদায় দেয়ার পর একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলো তারা।

চীনা ম্যাসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটে একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ভিডিওটি নিয়ে একটি বার্তা পোস্ট করে। সেখানে তারা জানায়, ওই সেনারা তাদের ব্যারাকে ফিরছিলো। এদের মধ্যে পাঁচজন তিব্বত অঞ্চলে দায়িত্ব পালনে স্বেচ্ছায় আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ওই বার্তায় এমন কথা নেই যে এদেরকে সীমান্তে নিয়োজিত করা হয়েছে। অথবা ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার কথাও ছিলোনা ওই বার্তায়।

গত ২২শে সেপ্টেম্বর চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের চীনা ভাষার সংস্করণে এই ভিডিওর খবরটি প্রকাশিত হয়। এতে তাইওয়ানের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। গ্লোবাল টাইমস বলেন, ভিডিওটি নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে তাইওয়ান। পিতা-মাতাকে অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানানোর ঘটনার এই ভিডিওকে তারা চীন-ভারত সীমান্তের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দেখিয়েছে বলেও জানানো হয়।

চীনের লাউডস্পীকার থেকে আসা সঙ্গীতের তালে নাচছে ভারতীয় সেনারা:

গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ভারত এবং চীন উভয় দেশের গণমাধ্যমে একটি খবর প্রচারিত হয় যে, ভারতীয় সেনাদের মনোযোগ অন্যদিকে ফেরানোর জন্য চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি সীমান্ত বরাবার লাউডস্পীকার বসাচ্ছে এবং সেগুলো থেকে পাঞ্জাবী গান বাজাচ্ছে।

গণমাধ্যামের রিপোর্টে আরো বলা হয়, চীনা সেনাবাহিনী এমন এক জায়গায় এসব লাউডস্পীকার বসিয়েছে যেটি ভারতীয় সেনাদের ২৪ ঘণ্টার নজরদারিতে আছে। ভারত ও চীন উভয় দেশের গণমাধ্যমে সেনাবাহিনীর সূত্র উদ্ধৃত করে এই খবরটি প্রচার করে। তবে জানা গেছে, ওই ভিডিওটি সীমান্তে লাউডস্পীকার বসানোর কথা জানার অনেক আগের। তবে ওই রিপোর্টের সঙ্গে কোনো ছবি বা ভিডিও ছিলো না। এরকম কোনো ঘটনা যে ঘটেছে সে বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনির পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়নি।

ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মানুষ এই পুরোনো ভিডিও শেয়ার করেছে। যাতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনারা পাঞ্জাবী গানের তালে তালে নাচছে। বিবিসির রিয়েলিটি চেকে জানা গেছে, সীমান্তে লাউডস্পীকার বসানোর অনেক আগের ভিডিও এটি।

সেপ্টেম্বরে শেয়ার করা একটি ভিডিও রীতিমত ভাইরালো হয়েছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছিলো, পাঞ্জাবী গানের তালে তালে পাঁচ জন সেনা নাচছে। ৮৮ হাজার মানুষ ওই ভিডিওটি দেখেছে। যারা এটি শেয়ার করেছেন, তারা দাবি করছিলেন, লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে ঘটেছে এই ঘটনা। তবে রিভার্স-ইমেজ সার্চ করে দেখা যাচ্ছে এই ভিডিওটি আসলে চলতি বছরের জুলাই মাসের।

ভিডিওটি ঠিক কোন জায়গায় রেকর্ড করা হয়েছে তা পরিস্কার নয়। তবে ওই সময়ের বিভিন্ন খবর দেখে বোঝা যায় এটি আসলে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ঘটনা। চীন-ভারত সীমান্তে এটি ধারণ করা হয় বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

চীনের বিশাল স্পীকার থেকে খুব জোরে গান বাজিয়ে ভারতীয় সেনাদের আহত করা হয়:

লাউড স্পীকার সম্পর্কিত আগের দাবিরই একটি ভিন্ন রূপ এই খবরটি। একজন চীনা টুইটার ব্যবহারকারী একটি বিরাট যন্ত্রের এই ভিডিওটি শেয়ার করেন। তিনি দাবি করেন যে, এটি ব্যবহার করা হচ্ছে খুব উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে ভারতীয় সেনাদের অসুস্থ এবং আহত করার জন্য। তবে এই যন্ত্রটি দিয়ে যে সীমান্তে গান বাজানো হয় তার কোনো প্রমাণ নেই।

দুই লাখেরও বেশি মানুষ এই ভিডিওটি অনলাইনে দেখেছেন। একটি ভারতীয় নিউজ চ্যানেলে পর্যন্ত এই ভিডিওটি দেখানো হয়েছে। ওই চ্যানেলটিও এই একই দাবি করে। আসলে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও ক্লিপটি ২০১৬ সালের মার্চ মাসের। ইউটিউবে ভিডিওটি ছাড়া হয়েছিলো।

যন্ত্রটি বানিয়েছে একটি চীনা কোম্পানি। তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি তৈরি করে। ভিডিওটি তাদেরই করা। যে যন্ত্রটির ছবি শেয়ার করা হয়েছে, সেটি আসলে একটি মোবাইল ওয়ার্নিং সাইরেন। এটি বেশ বড়, ওজন প্রায় ৪ দশমিক ৬ টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো জরুরি অবস্থার সময় বেসামরিক জনগণকে সতর্ক করতে এই সাইরেন ব্যবহার করা হয়। কোম্পানির ওয়েবসাইটে এই যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে এই বিবরণ দেয়া আছে।

এটি গান বাজানোর কোনো লাউডস্পীকার নয়। আর এই সাইরেন চীনা সেনাবাহিনী সীমান্তের কাছে ব্যবহার করছে কিনা, সেটাও ঠিক পরিস্কার নয়। অন্যদিকে, ভারতের কোনো সেনার কানের পর্দা ফেটে গেছে কিনা এরকম খবরও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

ভারতীয় সেনাদের বাস দুর্ঘটনার বিভ্রান্তিকর ছবি:

গত ২১শে সেপ্টেম্বর চীনের এক ব্যক্তি টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে। ওই পোস্টে দাবি করা হয়, সীমান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতীয়রা মাঝামাঝি জায়গা পর্যন্ত আসতে পারছে না। কারণ ভারতীয় সেনারা নিজেরাই নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সামরিক বাস নদীতে ডুবে যাচ্ছে, কাছে দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় সেনারা। আর নীচের লেখায় দাবি করা হচ্ছে, লাদাখে ভারতীয সেনাবাহিনীর আত্মহত্যার ভয়ংকর চেষ্টা।

ভিডিওটি প্রায় ৫ হাজার বার দেখা হয়েছে। ওই ভিডিওটি আসল ভুয়া নয়। তবে ওই দুর্ঘটনা ভারত-চীন সীমান্তের কাছে নয়। এটি ভারতের মধ্যমাঞ্চলীয় প্রদেশ ছত্তিশগড়ে ঘটেছে। গত সেপ্টেম্বরে বিজাপুর জেলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বহনকারী ওই বাস বন্যায় একাকার হয়ে যাওয়া নদীর পানিতে পড়ে যায়। তখন ভারতীয় গণমাধ্যমে ওই দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ করা হয়। উল্টে যাওয়া বাসটার ছবিও দেখানো হয়েছিলো। ওই দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি বলেও জানা গেছে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –