• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগের গৌরবময় ৭১ বছর এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২০  

ডঃ মুনাজ আহমেদ নূর 

বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ও সংগ্রামের ইতিহাসে ৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। যা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। আজ ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি। দলটির এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বছরই আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির পিতা ও দলটি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি শ্রদ্ধা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এর মধ্যে বেশ কিছু খাতে তার উদ্যোগ ছিল গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত এর উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কার বিশ্বে ডিজিটাল বিপ্লবে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হয়ে ওঠে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। বঙ্গবন্ধু তাই ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়ার দূরদর্শী চিন্তা থেকে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য প্রথমেই তিনি ১৯৭৩ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে আইটিইউ’র সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। স্যাটেলাইট স্থাপন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় তিনি দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু গৃহীত ও বাস্তবায়িত উদ্যোগগুলোই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল প্রেরণা। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আধুনিক রূপ আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ।

পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। ১৯৮১ সাল থেকে মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং জাতির ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে আজ অবধি এক এক করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়ে চলছেন তিনি। ২০০৯ থেকে ২০২০ এই ১১ বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী ও তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে তথ্যপ্রযুক্তির এক স্বর্ণযুগে। ২০০৬ সালের ৪ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির আয়োজনে ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বিগত ১১ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ কানেক্টিভিটি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনকে ঘিরে নেওয়া অধিকাংশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যার ফলে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। দেশে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় আনা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নে করা হবে। দেশের ২৮টি স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে হাইটেক পার্ক। ধাপে ধাপে দেশের সব জেলায় তা স্থাপন করা হবে। ভবিষ্যতে এই পার্কগুলো হবে ডিজিটাল অর্থনীতির লাইফ লাইন। দেশে এখন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটির বেশি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটির কাছাকাছি। দেশে প্রায় ০৬ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬শ’র বেশি সেবা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। এখান থেকেই জনগণকে বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য হয়। এর মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই ডিজিটালাইজেশন। আইওটি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষির ফলন বৃদ্ধি ও যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে দেশের প্রায় সবক’টি স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব এবং ১০০টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটির চারটি স্তম্ভের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কাছে সরকারকে নিয়ে যাওয়া। সরকারকে একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত, একটি কর্মমুখী এবং জনগণের সরকারে পরিণত করা। বিগত বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির স্বাক্ষর রেখেছে তার প্রতিফলন ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট সূচকে বাংলাদেশের বড় উত্তরণ ঘটে ২০১৮ সালে। এই সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে ৯ ধাপ, ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১১৫তম। আর ই-পার্টিসিপেশন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩ ধাপ উন্নতি হয়। সূচকে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। এই করোনা মহামারীর দুর্যোগ কাটিয়ে আমরা সোনার বাংলায় শিগগিরই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারব।

লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

সূত্র: দেশ রূপান্তর।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –