• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

আল আকসায় ৫০০ বছর আজানের সৌভাগ্য

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২১  

বংশপরম্পরায় ৫০০ বছর ধরে মসজিদে আকসায় আজান দেওয়ার অনন্য কৃতিত্ব ফিলিস্তিনের কাজ্জাজ পরিবারের। বর্তমানে এ পরিবারের অষ্টম পুরুষ ফিরাস আল কাজ্জাজ মসজিদে আকসায় মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন ফজরসহ তিন ওয়াক্ত নামাজের সময় তিনি আজান দেন। সুমধুর কণ্ঠে তাঁর আজান শুনে জেগে ওঠে পূর্ব জেরুজালেমবাসী। ৮০ বছর বয়সী বাবার সঙ্গে পালাক্রমে ফিরাস প্রথম দিকে আজান দিতেন। এর আগে তাঁর বাবাও প্রায় ৪০ বছর আল আকসায় আজান দেন। ফিরাস ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজের আজান দেন। ফিরাসের বাবা জোহর ও আসরের সময় আজান দেন।

১৫ শতাব্দীতে কাজ্জাজের পূর্বপুরুষ জেরুজালেমে আসেন। ঐতিহ্যবাহী এই বংশের অষ্টম পুরুষ ফিরাস আল কাজ্জাজ। ৩২ বছর বয়সী ফিরাস আল আকসা মসজিদের কনিষ্ঠতম মুয়াজ্জিন। মসজিদে আকসার সন্নিকটে আল সিলসিলা রোডের পাশে তাঁর পরিবারের বসবাস। তবে কয়েক বছর আগে দখলদার ইহুদিরা তাঁর ঘর ভেঙে ফেলে। ফিরাসের পরিবারের মূলত বর্তমান সৌদি আরবের হেজাজের অধিবাসী। ৫০০ বছর আগে তাঁর পূর্বপুরুষ মসজিদে আকসায় আসেন। সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় উসমানি সাম্রাজ্যের দায়িত্বশীলরা তাঁকে মসজিদে আকসার মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে বংশপরম্পরায় তাঁরা আজান দিয়ে আসছেন। মূলত জিকির ও ধর্মীয় সংগীতচর্চাই সুফি ধারার এ পরিবারের অন্যতম ঐতিহ্য।

শৈশবের স্মৃতিচারণা করে ফিরাস বলেন, ‘একদিন বাবা আমাকে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করতে বললেন। তখন আমার মাত্র ১০ বছর বয়স। তখনই প্রথম নিজের সুন্দর কণ্ঠস্বর উপলব্ধি করি। বাবা আমাকে উৎসাহ দিতে থাকেন। আর আমি তাঁর কাছে শিখতে থাকি।’ ১২ বছর বয়সে ফিরাস প্রথমবারের মতো মসজিদে আকসায় আজান দেন। ফিরাস বলেন, ‘মানুষ আমাকে উৎসাহ দিয়ে সামনে এগিয়ে দেয়। তখন আমার মনে হয়নি যে আমি একটি বিশেষ মসজিদে অবস্থান করছি; বরং মনে হয়েছে আমি সাধারণ কোনো স্থানে আছি। এখন আমি লক্ষাধিক মানুষের সামনেও কোনো বিব্রতবোধ ছাড়াই কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি।’ আলহামদুলিল্লাহ!

মসজিদে আকসার অতীত-বর্তমান নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ফিরাস বলেন, ‘আল আকসায় অতীত ও বর্তমানের মধ্যে বিশাল তফাত। আগে এখানে অনেক মাদরাসা ছিল। আরব বিশ্বের অনেক বড় বড় আলেম এখানে আসতেন। ইসলাম ও কোরআন শিক্ষা দিতেন তাঁরা। সুললিত সুরে কোরআন তিলাওয়াতের নানা ধরনের পদ্ধতি শেখাতেন। কিন্তু এখন আর তাঁদের কেউ আসতে পারেন না। ইসরায়েলি সেনারা এ অঞ্চলকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।’

আল আকসা নিয়ে নিজের আবেগের কথা এভাবে তুলে ধরেন ফিরাস—‘এখানের জড় পাথরগুলো আল কুদসের শত-সহস্র বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বলছে। আল আকসা মসজিদ আমাদের কাছে যেমন আধ্যাত্মিক স্থান, তেমনি তা রাজনৈতিক ইস্যুও বটে। এখানে এসে মুসলিমরা ইবাদত করবেন। রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত এ ভূমি আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের স্থান। আমি এ শহর ছেড়ে দূরে কোথাও থাকতে পারি না।’ ফিরাস আল কাজ্জাজ জেরুজালেমের ভোকাল মেলোডিজ ইনস্টিটিউটে দুই বছর আজানের অনুশীলন করেন। এরপর কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শায়খ মুহাম্মদ আল মিসরির কাছে পড়েন। মূলত আরব বিশ্বে সংগীতচর্চার আগে কোরআন তিলাওয়াতে পারদর্শী হতে হয়।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –