• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জাকাত সংগ্রহ ও একটি হাদীস

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২০  

সাম্প্রতিক কিছু লেখায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় জাকাত আদায়ের কথা ওঠে এসেছে। তাদের দাবি হচ্ছে, সরকার যদি নিজের তত্বাবধানে জাকাত আদায় ও বণ্টন করে তাহলে দেশের দারিদ্রের হার দ্রুত কমে আসবে। অন্য দিকে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাকাত ফান্ডের নামে জাকাত সংগ্রহ করে আসছে আগে থেকেই। 

জাকাতের ক্ষেত্রে মূল সিস্টেম হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত আদায় করা। এ কারণেই হজরত আবু বকর (রা.) এর সময় একদল লোক যখন বাইতুল মাল তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জাকাত দিতে অস্বীকার করে, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন।

জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আর্থিক ইবাদত। নামাজ, রোজা, হজ ইত্যাদি ইবাদত সমূহ সহীহ হওয়ার জন্য যেমন কিছু শর্ত রয়েছে তেমনি রয়েছে জাকাত আদায় সহীহ হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত।  এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে, জাকাতযোগ্য ব্যক্তিকে জাকাতের মালের মালিক বানিয়ে দেয়া। 

জাকাত পাওয়ার যোগ্য কারা, শরীয়ত তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জাকাত তো ফকির, মিসকিন, জাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী ও যাদের মনোরঞ্জন করা উদ্দেশ্য-তাদের জন্য। এ ছাড়াও জাকাত দাশমুক্ত করণ, ঋণগ্রস্তদের দায়মুক্তি, আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ ও মুসাফিরের জন্য।’ (সূরা তাওবা-৬০) ‘যাদের মনোরঞ্জন করা উদ্দেশ্য-তাদেরকে জাকাত দেয়া যাবে’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের প্রাথমিক যুগে অমুসলিমদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য জাকাত দেয়া হতো। কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে যায়।

মালিক না বানিয়ে কাউকে সরাসরি জাকাতের মাল বা তা দ্বারা ক্রয়কৃত বস্তু খাইয়ে দেয়া হলে জাকাত আদায় হবে না বলে ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন। এই আলোচনার অর্থ হচ্ছে, জাকাতের মাল যেনতেনভাবে খরচ করা যাবে না। অন্যথায় ব্যক্তির জাকাত আদায় হবে না। কখনো এমন হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে জাকাত ফান্ড থেকে ব্যাপক সাহায্য করা হলো। অথচ, যারা ক্ষতিগ্রস্থ তারা সকলেই জাকাতের উপযুক্ত নাও হতে পারে।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দূর্নীতি হয়ে থাকে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, হাজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা, বিদেশ থেকে আগত কোরবানির পশুর গোশত, ইয়াতিমের মালসহ এ ধরনের অনেক কিছুতেই দুর্নীতি হয়েছে। জাকাতের নামে টাকা কালেকশন করে তা দুর্নীতির রাঘববোয়ালের পেটে যাবে না তা অবিশ্বাস্য। আর এমনটা হলে মানুষের জাকাত আদায় হবে না। তাই জাকাতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার আগে এই সমস্যাগুলোর শুরাহা করতে হবে। এগুলোর সমাধান না করে, জাকাতের মাল সরকারের হাতে তুলে দেয়ার কথা বললে, সঠিকভাবে জাকাত আদায় হবে না।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনার ইতি টানতে চাই। হাদীসটি হজরত আবু হুমাইদ সায়েদী (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী করীম (সা.) এক ব্যক্তিকে জাকাতের মাল আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন। তিনি জাকাতের মাল নিয়ে এসে বলেন, এ হচ্ছে জাকাতের মাল আর এগুলো আমাকে দেয়া হাদিয়া। রাসূল (সা.) এ কথা শুনে  রাগান্বিত হন। সঙ্গে সঙ্গে মিম্বারে ওঠে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, আমি কাউকে কাউকে জাকাতের মাল আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে পাঠাই। সে এসে বলে, এ হচ্ছে জাকাতের মাল আর এগুলো আমার জন্য হাদিয়া। সে কেন ঘরে বসে থেকে যাচাই করেনি যে, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় নাকি? তারপর রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, জাকাতের মাল থেকে কেউ যদি একটি উট, গরু বা ছাগল যাই নিবে, কিয়ামতের দিন ওই প্রাণীটি আওয়াজ দিতে দিতে আসবে।’ (মেশকাত) রাসূল (সা.) এর রাগের কারণ হচ্ছে, হতে পারে হাদিয়ার লোভে জাকাত নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম আদায় করবে। এতে জাকাত দাতা ও গ্রহীতা উভয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর এর কারণ হচ্ছে, সরকারি কর্মচারী। যেখানে রাসূল (সা.) এর যমানায় এমনটির আশংকা ছিলো, সেখানে আজকের এই দিনে এই আশংকার মাত্রা কতটুকু বেড়েছে, তা সকলেই জানি। তাই বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে জাকাত সংগ্রহ ও প্রদানের আগে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা প্রয়োজন। তাহলে সুষ্ঠুভাবে জাকাত আদায় হবে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –