• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

নতুন প্রজন্মের ঈমান রক্ষায় করণীয়

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২১  

উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের অনুভূতি জাগ্রত হওয়া। এটা বুঝতে শেখা যে তার কি প্রয়োজন? এবং তা পূরণে তার করণীয় কি? অনুভব ও অনুভূতি অনেক বড় বিষয়। এর মাধ্যমেই পৃথিবীতে বহু বড় বড় কাজ সম্পন্ন হয়। কখনো কখনো মানুষ উদাসীন ও অমনোযোগী হয়। ফলে তার ভেতর কোনো অনুভূতি কাজ করে না। সে বোঝে না তার কি প্রয়োজন এবং সে প্রয়োজন পূরণে তার ভেতর কী কী দুর্বলতা রয়েছে। এরপর যখন তার ভেতরটা জেগে ওঠে তখন সেই দুর্বল মানুষের জীবনে বিপ্লব বয়ে যায় এবং সে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যায়।

খলিফা হওয়ার আগে ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) মদিনার গভর্নর ছিলেন। প্রথমে অন্যান্য গভর্নরের মতোই চলাফেরা করতেন, উন্নত পোশাক পরিধান করতেন, মূল্যবান সুগন্ধি ব্যবহার করতেন; এক কথায় উন্নত জীবন যাপন করতেন। এমনকি তার চাল-চলন অন্যরা অনুসরণ করতে লাগল এবং তার নাম হলো ‘আল মায়িশাতুল ওমরিয়্যা’ বা ওমরীয় জীবনধারা। কিন্তু খলিফা মনোনীত হওয়ার পর তিনি সম্পূর্ণ বদলে গেলেন। তার কাছে আরাম আয়েশের যত উপকরণ ছিল তিনি সব দরিদ্র মানুষের জন্য দান করে দিলেন। অতি সাধারণ জীবন যাপন শুরু করলেন। ইতিহাস গ্রন্থে এসেছে, তার সন্তানরা নতুন জীবনে বিচলিত ছিল। খাবার তাদের পছন্দ হতো না। একবার তিনি সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে এলে তারা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। তিনি কারণ জানতে চাইলে তারা বলল, ঘরে অন্য খাবার না থাকায় তারা পেঁয়াজ খেয়ে আছে। তাদের ধারণা এতে খলিফার কষ্ট হবে। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, যদি তোমরা চাও এবং পছন্দ করো যে তোমাদের পিতা জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাক, জান্নাতে প্রবেশ করুক আবার তোমাদেরকে তোমাদের পছন্দের খাবার দিক, তবে আমি তাতে অপারগ। তিনি তাঁর দেশ শাসনের এমন দৃষ্টান্ত দাঁড় করালেন যে মানুষ তাঁকে খোলাফায়ে রাশেদার অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। তাঁর জীবনে এই আমূল পরিবর্তন এসেছিল অনুভূতির পরিবর্তনের কারণে। তিনি একজন খলিফা হিসেবে তাঁর যে দায়িত্ব তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

সুতরাং উপলব্ধি জাগ্রত হলে মানুষের ভেতর পরিবর্তন আসবে। মুসলিম জাতির মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে অভাব অনুভূতি, উপলব্ধি ও চেতনার। আমরা হতাশার সঙ্গে দেখছি, অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তারা আপন লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাদের জাগরণ দমিয়ে রাখতে বহু পরিকল্পনা কাজ করছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওপর দৃষ্টি রাখলে খুব সহজে তা চোখে পড়বে। অথচ মুসলিমদের ভেতর তা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। ফলে তা থেকে উত্তরণেরও পথ খোঁজে না। এর ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলাম। সেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ শিক্ষিত। কারণ স্থানীয় মুসলিম সজাগ ও সচেতন। তারা জানে সমাজে তাদের অবস্থান কী? এবং তাদের করণীয় কী? আর তারা তা পূরণও করছে। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই জানি। শিক্ষা ও সুশিক্ষা ছাড়া বর্তমান সময়ে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং বড় লক্ষ্যও অর্জন করা যাবে না। শিক্ষায় যে জাতি পিছিয়ে সে জাতি জাগতিক জীবনেও পিছিয়ে। যেহেতু জাগতিক জীবনের প্রয়োজন পূরণে আমাদের জাগতিক শিক্ষারও প্রয়োজন হয়, তাই শিক্ষা কারিকুলামে আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় করতে হবে। যেন তারা পার্থিব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে এবং তাদের ঈমান ও ধর্মীয় জীবন রক্ষা পায়।

প্রথমত, শিশুরা যখন মক্তবে যায় বা তারা পারিবারিক পরিবেশে থাকে, তখন তাদের ঈমান ও বিশ্বাসের শিক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। কেননা শৈশবের শিক্ষা ও বিশ্বাস শিশুর মনে গভীর রেখাপাত করে। সহজে তা দূর হয় না। তাই এ সময় তাকে ঈমান, ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, উত্তম চরিত্র শেখানো প্রয়োজন। শৈশবে শিশুকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে শিশুকে দ্বিনের ওপর রাখা কঠিন হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে শিশুরা যখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে যায়, তখন তাদের প্রথমে ফরজ বিধানগুলো এবং ইসলামের অপরিহার্য বিভিন্ন দিক তাদের শেখাতে হবে। এরপর তাদের মুসলিম হিসেবে জীবন যাপনের জন্য যেসব সামাজিক ও আর্থিক (মুআমালাত ও মুআশারাত) বিধি-বিধানের প্রয়োজন হয়, তা শেখাতে হবে। আর তাদের তা শেখাতে পারেন গভীর জ্ঞান ও বোধসম্পন্ন আলেমরা। মাদরাসাগুলোতে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার আয়োজন রয়েছে এবং তার প্রয়োজনও রয়েছে। তবে মুসলমানের সন্তানরা যে পরিমাণ মাদরাসায় আসে, স্কুল-কলেজে যায় তার চেয়ে বহু গুণ বেশি। তাদের পরিমাণ এক থেকে তিন ভাগের বেশি নয়। তাই মাদরাসার বাইরে থাকা বিপুল মুসলিম শিশুদের জন্য ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা হতে পারে স্বতন্ত্র ইসলামী স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ভারতে যেমন ইসলামিয়া স্কুল ও ইসলামিয়া কলেজ রয়েছে। যেহেতু স্কুল-কলেজে যাওয়া শিশুদের ফেরানো যাবে না এবং তাদের ফেরানো উচিতও হবে না, তাই তাদের জন্য দ্বিনি বিবেচনায় অনুকূল শিক্ষা দিতে হবে। আর অবশ্যই তাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে হবে এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে হবে, যেন সরকারি স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার মান কম না হয়।

তৃতীয়ত, কর্ম জীবনে গিয়ে শিশুরা যেন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে না পড়ে, এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে বাধ্য না হয়—যারা দ্বিন পালনের সুযোগ দেবে না তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের চিন্তা করতে হবে। তাদের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান হতে পারে। যেমন তারা ব্যবসা করতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে পারে।

চতুর্থত, মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। পরিবারে দ্বিন পালন, ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। যেন শিশুর মন ও মস্তিষ্কে, চিন্তা ও চেতনায় ইসলামী জীবনধারার সঙ্গে মিশে যায়। ইসলাম পালনে তারা অভ্যস্ত হয়।

পঞ্চমত, জাতি হিসেবে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিশুদের জানানো। ইসলামী সভ্যতার সোনালি অধ্যায়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরা। যেন তারা ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত এবং বর্তমান বিপর্যয়কর অবস্থার জন্য হীনম্মন্যতায় না ভোগে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –