• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশ ১০ কোটি ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছে

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে চলছে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। বাজারে আসার আগেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ কিনেও রেখেছিল সরকার। এবারে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশের জন্য জাতিসংঘের বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট ‘কোভ্যাক্স’ থেকে আরও আরও ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে সরকার। এর সঙ্গে ভারত সরকারের উপহার দেওয়া ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনসহ মোট ১০ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিনের প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশ এখনো এত পরিমাণ ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে না পারলেও বাংলাদেশে সেটি করতে পেরেছে। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের যে গতি ও স্বচ্ছতা এখন আছে, তা ভবিষ্যতে ধরে রাখতে পারাটাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে গত নভেম্বরে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। ওই চুক্তি ছিল তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য। প্রথম চালানে এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে সরকার। এর আগেই ভারতের পাঠানো উপহার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতেই দেশে দ্বিতীয় চালানে আসছে আরও ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। সিরামের কাছ থেকে কেনা বাকি ভ্যাকসিনও পর্যায়ক্রমে আসবে দেশে। তবে ভারতের উপহার ও প্রথম চালান মিলিয়ে ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বুঝে পাওয়ার পরপরই দেশে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়।

সিরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা এরই মধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশে কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হল কোভ্যাক্স। বিশ্বের সব মানুষের এই সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করতেই এই বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই উদ্যোগ থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন বিতরণের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যায়— জুনের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে। কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই পাচ্ছে বলে জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য এই পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি।

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, কোভ্যাক্স থেকে এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ২৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য তারা ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। এক্ষেত্রে তারা এখনো পর্যন্ত ছয় কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বলেও নিশ্চিত করেছে। এর প্রথম চালান এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুর দিকেই আসতে পারে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, এছাড়াও সরকারের কিনে আনা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে। ভারত সরকারের উপহার আরও ২০ লাখ ভ্যাকসিনও আমাদের হাতে রয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, আমাদের পাইপলাইনে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন নিশ্চিত হয়ে আছে। অর্থাৎ আমরা পাঁচ কোটি মানুষকে দুই ডোজ করে ভ্যাকসিন দিতে পারব খুব অল্প সময়ের মধ্যেই।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের চলমান কর্মসূচি নিয়ে ডা. আলমগীর বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও এখন মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছে। দিন দিন নিবন্ধন বাড়ছে। এক্ষেত্রে বলা যায় আমরা খুব দ্রুতই টার্গেট অনুযায়ী ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারব।

ভ্যাকসিন প্রয়োগে চ্যালেঞ্জ
দেশে এখন পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ চললেও এতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর শুরু হবে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম। তখন প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কাজ যেমন চলবে, তেমনি তখনও নতুন করে অনেককে ভ্যাকসিন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের সাপ্লাই-চেইন ঠিক রাখাটা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসাটাও একটি চ্যালেঞ্জ।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, আমাদের এখানে যেভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তা ইতিবাচক। শুরুর দিকে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে মানুষজনের তেমন আগ্রহ ছিল না। সে আগ্রহ এখন অনেকটাই বেড়েছে। বিশ্বজুড়েই ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি। তবে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা একটা চ্যালেঞ্জ। আশা করছি এ বিষয়েও দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসব চ্যালেঞ্জকে অবশ্য বড় বলে মনে করছেন না স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আসলে এখনো তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সরকার জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে। ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যাও বাড়ছে। একইসঙ্গে রেজিস্ট্রেশনও বাড়ছে। আর তাই প্রথম মাসে আমরা ৩৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও সেটি এখন পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হবে প্রথম ডোজ হিসেবে। আর পাইপলাইনে থাকা ভ্যাকসিন আসতে থাকলে সেখান থেকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পরে সবাইকে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এখন প্রায় প্রতিদিন প্রায় দুই লাখের বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। আশা করছি এই সংখ্যা আরও বাড়বে। একইসঙ্গে রেজিস্ট্রেশনও বেড়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ লাখের বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আমাদের সাপ্লাই-চেইনের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও ভ্যাকসিন কিন্তু দ্রুতই আসছে। তাই আমরা আশা করছি, সারাদেশে এখন যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে, সেটা আমরা ধরে রাখতে পারব।

তিনি বলেন, একেকজনকে দুই ডোজ করে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু মানুষের উৎসাহ বাড়ছে, তাই আমরা চার সপ্তাহের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আট সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বা সময়সীমা নিয়ে আর ভাবনার কিছু নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছুই করা হচ্ছে।

এর আগে, দেশে গত ২১ জানুয়ারি ভারতের পাঠানো উপহারের ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে দেশে। চার দিন পর ২৫ জানুয়ারি আসে সিরামের কাছ থেকে কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান, যাতে ছিল ৫০ লাখ ডোজ। পরে ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়।

এদিন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ দিনে সারাদেশে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ২৩ লাখ ৮ হাজার ১৫৭ জন। আর এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩৫ লাখের বেশি মানুষ।

বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই করোনা মোকাবেলা করা সহজ হয়েছে। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –