• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

‘মননের অপূর্ব সমাহার ছিল রাসেলের কচি মনে’

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২০  

পৃথিবীর কোনো পঙ্কিলতাই যাকে স্পর্শ করেনি, সেই শিশু রাসেলেরও প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ঘাতকের দল। ইতিহাসের নির্মম ট্র্যাজেডির শিকার রাসেল কেমন ছিল, তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তার একজন শিক্ষক।

শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের ওয়েব টিম আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে রাসেলকে পড়ানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন গীতালি দাশগুপ্তা। রোববার ওয়েব টিমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী রোববার। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করে রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বর ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারাতে হয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু রাসেলকে।

রাসেলকে নিয়ে তার শিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘শেখ রাসেলকে একবার যেটা শিখিয়েছি, তা সে কোনো দিন ভোলেনি। অত্যন্ত মানবিক ছিল সে। একই সঙ্গে মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল রাসেলের কচি মনে।’

সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘আমার সামনে পরীক্ষা থাকায় শেখ রাসেলকে পড়াব না বলে আমি বলে দিই। এ কথা শুনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বললেন, ৩০ মিনিট? আমি বললাম, তাও সম্ভব না। তিনি আবার বললেন, ২০ মিনিট? আমি চুপ করে রইলাম, মানে ২০ মিনিটও সম্ভব না। তারপর তিনি আবারও বললেন, ১৫ মিনিট? তখন আমার কাছে মনে হলো, একজন মা তার ছেলের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় চাইছেন, এই সময়টুকু তো আমার দেওয়া উচিত। আমি চেঞ্জ হয়ে গেলাম।

‘তারপর আমি কাকিমার (বঙ্গমাতার) দিকে তাকিয়ে বললাম, এই রাস্তায় কি বাস চলে? নইলে আমি যাতায়াত করব কীভাবে? আমার তখনো এই বোধটুকু নেই যে আমি কাকে যাতায়াতের কথা বলছি। তখন বঙ্গমাতা বললেন, আপনি পড়াবেন? তাহলে যাতায়াতের ব্যবস্থাটুকু আমিই করব।’

এর পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘শেখ রাসেলকে যেটা শিখিয়েছি, সে তা কোনো দিন ভোলেনি। শেখ রাসেল একবার বলে, আমি আর অঙ্ক করব না। আমি প্রশ্ন করলে বলে, আমার ইচ্ছে করে না। এরপর আমি চিন্তা করলাম, কীভাবে শেখানো যায়। বললাম যে তুমি স্কুলে চকলেট নিয়ে যাও? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, একা একা খাও, তাই না? রাসেল বলল, নাহ, একা খাই না, বন্ধুদের দিয়ে খাই। তখন বললাম, এই যে তুমি দুইটা অঙ্ক রেখে দিলে, তারা কষ্ট পাবে না?

‘রাসেল বলল, কেন কষ্ট পাবে? ওরা কি কথা বলতে পারে? খুব অবাক ও। আমি বললাম, এই যে আমাদের বাংলাদেশ আছে, তেমনই একটা অঙ্কের দেশ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। কষ্ট পেয়ে যাবে। এরপর রাসেল টপ টপ করে দুটো অঙ্ক করে বলে, এখন তো আর ওরা রাগ করবে না। এখন তো আর অঙ্কের দুঃখ নেই।’

শেখ রাসেলকে নিয়ে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমি তাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রতীকী শিশু হিসেবে দেখি। রাসেলের হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে একটি ছবি আছে, তা দেখলে আমার কাছে প্রতীকী অর্থে সে বড় হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই দেশাত্মবোধ ছিল তার মধ্যে। একেবারে পরিবার থেকে পাওয়া।’

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –