• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শত বছরের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টিতে ডুবল রংপুর

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০  

দেশের উত্তরাঞ্চলে আগের বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন করে পানি ওঠায় এমনিতেই দিশাহারা মানুষ। এর ওপর টানা বৃষ্টি বন্যার্তদের দুর্ভোগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে অব্যাহত বর্ষণে শ্রমজীবীদের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রংপুরে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গত শনিবার রাতে। এতে নগরেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে রেকর্ড ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—

ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন, সুক ও সেনুয়ার পানি বৃদ্ধি: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন, সুক ও সেনুয়া নদীর পানি বেড়েছে। এতে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণে শ্রমজীবীদের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। সরকারি ত্রাণ সহায়তার দাবি জানিয়েছে তারা; যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

পৌর শহরের টাঙ্গন নদের ধারের জলেশ্বরীতলার বাসিন্দা আল আমিন জানান, তাঁদের এলাকাটি নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন তাঁরা। একই এলাকার মোহাম্মদ সুমন জানান, বাড়িঘরে পানি ওঠায় গবাদি পশু পার্শ্ববর্তী গোবিন্দনগর গ্রামে আত্মীয়র বাড়িতে রেখে এসেছেন। কাজে যেতে না পারায় খুব কষ্টে রয়েছেন।

নীলফামারীতে কমছে তিস্তার পানি: বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও নীলফামারীতে কমেছে তিস্তা নদীর পানি। গতকাল রবিবার বিকেল ৩টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ ছিল বিপত্সীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপরে। তিস্তায় পানি বাড়ায় বৃহস্পতিবার জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চরাঞ্চলের ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রংপুরে: এক রাতের বৃষ্টিতে যেন মহাপ্লাবন হয়েছে রংপুরে। মহানগরীসহ জেলার বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় নগরীর প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রংপুরে। ১০০ বছরের মধ্যে এমন বৃষ্টি হয়নি বলে জানাচ্ছে রংপুর আবহাওয়া অফিস। সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১৯১০ সালের দিকে রংপুরে এমন প্রবল বর্ষণ হয়েছিল। ১১০ বছর পরে আবার এমন বর্ষণ হলো। বৃষ্টি আরো দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। নগরবাসীও বলছে, তারা এমন বৃষ্টিপাত দেখেনি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায়ও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।

নগরীর বেশির ভাগ সড়ক তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকায় কোমরসমান পানি জমেছে। অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। হনুমানতলা এলাকার গৃহিণী নুরজাহান বেগম জানান, তাঁর ঘরে পানি ঢোকায় সারা রাত নির্ঘুম কেটেছে। গত শনিবার রাতে রান্না করতে না পাড়ায় হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। কেরানিপাড়ার শতবর্ষী আবু মিয়া জানান, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় এমন বৃষ্টিপাত হতে দেখেননি।

কুকরুল বিল, চিকলি বিলসহ অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গতকাল সকালে নগরীর রাস্তায় অনেককে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। দুপুর ১টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শ্রমজীবী মানুষ কাজ না পেয়ে বেকায়দায় পড়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহামুদুর রহমান টিটু বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র ও কাউন্সিলররা এলাকা ভাগ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। নগরীর সেনপাড়া, মুলাটোল, রাধাবল্লভসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানিবন্দি লোকজনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে আশ্রিত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে রেকর্ড বৃষ্টিপাত : কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপত্সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। নদী অববাহিকার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই ফের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়েছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এক মাসের ব্যবধানে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বজরা, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, থেতরাই, দলদলিয়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের ছয় শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে চলতি মৌসুমের রেকর্ড ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছিল জলজট। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও ডেনেজ ব্যবস্থা অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –