• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম টিকা পাবেন

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২১  

ভারত সরকারের সহায়তার ২০ লাখ টিকা প্রথমেই পাবেন সম্মুখসারির যোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাতে পাওয়ার পর সীমিত আকারে ঢাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। প্রথমে দুটি সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের দেওয়া হবে। এরপর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তাদের পর পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে অন্যান্য স্থানে। এর মধ্যে চুক্তির টিকা চলে এলে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে দেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা আজ বা আগামীকাল দেশে পৌঁছবে। সেরাম টিকা গ্রহণ ও সংরক্ষণের বিষয়ে চলছে প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই টিকা দেশে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভারত থেকে সহায়তা হিসাবে পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা আজ বুধবার বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশে আসছে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আমাদের যে শিডিউল আছে, সেই অনুযায়ী আসবে। আগামীকালের একটা শিডিউল আছে। অথবা পরশু আসবে। এটাই সর্বশেষ খবর। ভারত এই টিকা আমাদের কাছে পৌঁছে দেবে। আমি বিমানবন্দরে গিয়ে টিকা গ্রহণ করব। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের দেহে প্রয়োগের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। সীমিত আকারে ঢাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই টিকা নিচ্ছেন-বাংলাদেশে এমন হবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপাতত এ ধরনের চিন্তা নেই। আমরা ভাবছি যাদের সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, ফ্রন্টলাইনার, তাদের আগে দেব। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ প্রথমে পাবে। সাংবাদিকদেরও দেওয়া হবে। যেভাবে পরিকল্পনা করা আছে, সেভাবেই হবে। ভিভিআইপিরা আগে পাবেন না।’

জানা গেছে, ১৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে তালিকা পাঠাতে চিঠি দেন।

সেখানে তিনি বলেন, জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার প্রতিষ্ঠানের বা আপনার সংগঠনের সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে।

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব নিবন্ধিত বেসরকারি ও স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা (চিকিৎসক, সেবিকা ও মিডওয়াইফ, স্যাকমো, অলটারনেট মেডিকেল কেয়ার, হোমিওপ্যাথি, ফার্মাসিস্ট, টেকনোলজিস্ট, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ধোপা, টিকিট ক্লার্ক, কুক, মশালচি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্সচালক ও অন্যান্য সরসরি সম্পৃক্ত সেবাদানকারী) এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হবেন। চিঠি পাওয়ার দুই কর্মদিবসের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানের লোকবলের তালিকা সংকলিত করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে বলা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিঠি পাঠানোর পর ইতোমধ্যে দুই কর্মদিবস শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তালিকা পাঠানো হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা অধিদপ্তরের এমআইএস শাখায় আসার কথা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান হেলাল যুগান্তরকে বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালিকা পাঠিয়েছে। তবে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা এই তালিকা গ্রহণ করব, আশা করছি, বাকি দুদিনে সবাই তালিকা পাঠাবে। সরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি সব স্বাস্থ্যকর্মীর তালিকা মন্ত্রণালয়ের এইচআরএম-এ রয়েছে। তাই সেটি নতুন করে করতে হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ভারত থেকে আসা এসব টিকা সিএমএসডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই এবং তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সেও কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। সরকারের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এক সপ্তাহ পর সব জেলায় শুরু করা হবে। এটাই আমাদের পরিকল্পনা। ভারতের সহায়তার ২০ লাখ ডোজ টিকা কখন কাকে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের যেভাবে জানাবে, সভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আসেন। ভারত থেকে আসা টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এর আগে ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনা হয়েছে, সেটি দেশে আসছে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির ভেতরে। সেজন্য সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার এই ২০ লাখ ডোজ সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজের অতিরিক্ত। 

অধিদপ্তর জানায়, করোনার টিকা দেশে এলে প্রথমে দেওয়া হবে স্বেচ্ছাসেবকদের। তাদের টিকা দেওয়ার পর কমপক্ষে এক সপ্তাহ দেখা হবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না। স্বেচ্ছসেবকদের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হলে, সবকিছু ঠিক থাকলে, তবেই পরিকল্পনা অনুসারে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে ফেব্রুয়ারিতে। ২৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে অনলাইনে নিবন্ধন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, মূলত প্রথমে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে টিকা দেওয়া হবে মানুষের মনে সাহস সঞ্চার করতে। সেখানে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়া হবে। তবে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সব কাজ শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। 

সরকারের টিকাদান সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশে টিকা আসার পর এ মাসের মধ্যেই একাধিক প্রতিষ্ঠানের কিছুসংখ্যক বাছাইকৃত নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। এরপর অন্যদের টিকা দেবে। এর পরই ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা প্রয়োগ।

এক্ষেত্রে সবার আগে টিকা পাবেন সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি কোভিড রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্সচালক, যাদের সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৭ জন।

এরপর পাবেন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি কোভিড রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্সচালকদের মধ্য থেকে ছয় লাখ।

একই ধাপে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অন্যান্য বিভাগের আরও ১ লাখ ২০ হাজার চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য, ২ লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য (যারা সরাসরি করোনাসংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন) এবং সশস্ত্র বাহিনীর ২ লাখ ৬০ হাজার সদস্য পাবেন টিকা।

বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পাঁচ হাজার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাও টিকা পাবেন প্রথম ধাপেই। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা সরাসরি করোনার খবরাখবর সংগ্রহে কাজ করেছেন-এমন ৫০ হাজার জন টিকা পাবেন প্রথম ধাপেই।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –