• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অনেকের কাছেই রহস্য দিনাজপুরের শতবর্ষীয় ‘অচিন’ গাছ

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২১  

দিনাজপুরের ‘অচিন’ নামের শতবর্ষীয় এই গাছটি বিলুপ্তপ্রায়। এই প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে আজও অজানা। গবেষণার মাধ্যমে এই গাছের রহস্য উদঘাটন করা গেলে নতুন অনেক তথ্য জানা যাবে বলে মনে করেন উদ্ভিদবিদরা।

উদ্ভিদবিদরা ধারণা করছেন, গাছ দুটি ডুমুর প্রজাতির। স্থানীয়রা বলছেন, এই গাছে ছোট ডুমুর জাতীয় ফল হওয়ার আগে গাছের নিচে ফুলের পাপড়ি ঝরে। কিন্তু ডুমুরের তো ফুল হয় না।

দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউপির গোপালগঞ্জ হাটের রাস্তার পাশে প্রকাণ্ড এই উদ্ভিদ গাছ দুটি রয়েছে। ৪০-৫০ ফুট উঁচু শাখা-প্রশাখা যুক্ত উদ্ভিদ গাছটির সঠিক বয়স জানা না গেলেও এর বয়স শতাধিক বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই গাছের চারদিকে ১০-১৫টি দোকান রয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে দ্বিতীয় এমন গাছ আর দেখা যায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। গাছটি নিয়ে এলাকার সবার ধারণা, এটি অচিন গাছ এবং তারা এই গাছটিকে অচিন নামেই ডাকে।

গাছটি শনাক্তকরণ এবং তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেনসহ একদল শিক্ষার্থী। উদ্ভিদটি পর্যবেক্ষণে নানা সময়ে অনেকেই এসেছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।

তবে এই উদ্ভিদের অস্তিত্ব পাওয়া একটু কঠিন বলেই দাবি করেছেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও লেখক মো. দেলোয়ার হোসেন। ‘অচিন’ নামের শতবর্ষীয় এই গাছ বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ‘সাদা ডুমুর বা পাকুড়’ হতে পারে বলে জানান তিনি।

গাছের নিচে বসা ৬৫ বছর বয়সী দোকানি ইয়াসীন আলী বলেন, জন্মের পর থেকেই গাছটিকে এমনই দেখে আসছি। আমার বাপ-দাদারাও এমনই দেখেছেন। সবাই ‘অচিন গাছ’ নামেই জানেন। 

গাছটি সংলগ্ন আরেক দোকানি ৪৫ বছর বয়সী নূর সামাদ জানান, গাছটিতে ছোট সাদা রঙের ফল ধরে। পাপড়ি ঝরে পড়ে এবং ফলও হয়। গাছটিতে বছরে দুইবার পাতা ঝরে যায়। এর কচি ডাল ও পাতা ছিড়ে গেলে সাদা আঠা বের হয়। কিন্তু গাছটির নাম কেউ জানেন না। তাই সবার কাছে ‘অচিন গাছ’ নামেই পরিচিত।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও উদ্ভিদ বিষয়ক লেখক দেলোয়ার হোসেন জানান, এটা অচিন গাছ নয়, তবে এ বৃক্ষটিকে সাদা ডুমুর বা পাকুড় বলা যেতে পারে। এটির বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতা আছে। গাছটিতে ছোট ছোট গোলাকার সাদা রঙের ফল ধরে। ফল ডুমুরের মতো হলেও ডুমুর অপেক্ষাকৃত ছোট এবং সাদা বর্নের হয়। সাদা পাকুড় বা ডুমুর আকার-আকৃতিতে বট গাছের মতোই বিশাল ও বিস্তৃত।

তিনি আরও জানান, সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও এর তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এই বৃক্ষ বিরল। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এই গাছে পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতা গজায়। পাতা মসৃণ ও লম্বাটে। এই গাছের ফল পাখির প্রিয় খাবার। সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গাছটিতে ফল ধরে। আসলে এই গাছের বিষয়ে আমরা এখনো বিশেষভাবে বলার মতো কিছু উদঘাটন করতে পারিনি। তবে এটা সত্য, গাছ দুটি বিরল প্রজাতির।

দিনাজপুর সদরের গোপালগঞ্জ হাটের স্থানীয়দের মতে, প্রজাপ্রেমী গোপাল রাজার সম্মানার্থে এই বাজারটির নাম হয়েছে। আর বাজারের পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যাবে বিশাল দুটি গাছ। প্রজাতি সম্পর্কে না জানায় কেউ বলে ‘অচিন গাছ’ আর কেউ বলে ‘অচিন্ত’। শতবর্ষীয় পাশাপাশি দুটি গাছের এমনই নাম ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুটি গাছ এখন অনেকের কাছেই রহস্য।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –