• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২  

কুড়িগ্রামের সর্বত্র শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম। ক্ষেত থেকে ধান কাটা, উঠানে নিয়ে আসা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। 

কৃষক-কিষাণীর সঙ্গে দিনমজুরদেরও দেখা গেছে কর্ম ব্যস্ততা। গ্রামাঞ্চলে মাড়াইকৃত বোরো ধান ও ধানের খড় শুকানোর কাজে নারী শ্রমিকরা বসে নেই। তারা কৃষক-কিষাণীর কাছে দিন মুজুরী হিসেবে অর্থ বা চালের বিনিমিয়ে কাজ করছেন।

ফলন ভালো হওয়ার সঙ্গে এখানে ধান-কাটা মাড়াইয়ে দিনমজুরের দামও বেড়েছে। এখানে এক বিঘা জমির বোরোধান কাটা-মাড়াই মূল্য হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। কাটা-মাড়াইয়ের দাম পেয়ে একানকার দিনমজুররাও খুশি।

জানা গেছে, এবার কুড়িগ্রামের ৯ টি উপজেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরোধান রোপণ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বোরোর ফলনও বেশ ভালো হয়।

তবে চৈত্র মাসের বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বেড়ে যাওয়া নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে নদ-নদী অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলে চাষকৃত ২৭৬ হেক্টর জমির আবাদ ডুবে যাওয়ায় এখানে নিন্মাঞ্চলের কিছু বোরোক্ষেতের উৎপাদন একটু কমে গেছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া সর্বত্রে বোরোর ফলন ভালো হয়েছে বলে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির সূত্র জানায়। খামার বাড়ির সূত্রমতে, কুড়িগ্রামে হেক্টর প্রতি গড়ে ৪ দশমিক ৪-৯ ধান উৎপাদন হয়েছে। 

হাইব্রিড জাতের ধান বিঘাপ্রতি উৎপাদান হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ। অন্যান্য জাতের বোরোধান বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ মণ। তবে গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন বোরোধান কাটা-মাড়াই করে তারা বিঘাপ্রতি বোরোধান পেয়েছেন ১৮ থেকে ২০ মণ।

স্থানীয় কাশিপুর এলাকার বোরোধান চাষি আমিনুল ইসলাম জানান, তার এক বিঘার মতো জমিতে  তিনি হাইব্রিড জাতের মাইক্রোওয়ান ধান চাষ করেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। বিঘায় ২০ মণ ধান পাবেন বলে জানান তিনি।

বিদ্যাবাগীশ এলাকার কৃষক ছবির উদ্দিন জানান, আমি এবার ৫-৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২২ মণ করে ধান পেয়েছি। ফলন ভালো হলেও ধান-কাটা মাড়াইয়ে বিঘাপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা শ্রমিকমূল্য দেয়ার কারণে তিনি বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।

বালারহাট এলাকার বালাটারী গ্রামের মুকুল মিয়া জানান, ইনশাআল্লাহ আমার পৌনে ৪ বিঘা জমিতে চাষকৃত মোটা জাতের হাইব্রিড ধান থেকে বিঘাপ্রতি ২৫ মণ করে ধান পাবো বলে আশা করছি। তবে আকাশে রোদ হলেই ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে আমার।

স্থানীয় গৃহবধূ আরজিনা বলেন, আমরা এখন বোরোধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছি। কৃষক স্বামীর সঙ্গে বোরোধান কাটা-মাড়াইয়ে সহযোগিতা করছি। মাড়াইকৃত ধান ও ধানের ঘর শুকাতে আমাদের সময় চলে যাচ্ছে।

বড়ভিটা গেটের বাজার এলাকার দিনমজুর আজির আলী, আলতাফ হোসেন ও ওবায়দুল হকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এবার কৃষকের বোরো ধানের ফসল ভালো হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের দিনমজুরের দামও বেড়েছে। এতে আমরা খুশি।

কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের কৃষি শ্রমিক মাকন চন্দ্র, দ্বিনেশ চন্দ্র, একরাল আলী জানান, এবার বোরো ধান কাটানোর শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। এর সঙ্গে শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে। কারণ বোরোধান কাটা-মাড়াই সব স্থানে লেগেছে।

কৃষি শ্রমিকরা আরো জানান, আমরা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া প্রতিবিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই বাবদ শ্রমিক মূল্য নিচ্ছি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। শুকনো জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ে শ্রমিকের মজুরী হিসেবে বিঘাপ্রতি নেয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা।

দিনমজুররা আরো জানান, আগে আমরা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় প্রতিদিন দিনমজুর দিতাম। এবার বোরো ধান কাটা মৌসূমে একজন দিনমজুরের দৈনিক কাজের হাজিরা হিসেবে পাচ্ছি ৫০০ টাকা। এতে তরিতরকারি ও মাছ মাংস খেতে পাচ্ছি আমরা।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, এবার কুড়িগ্রামে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরোধানের চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরোর ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

জয়নাল আবেদীন আরো জানান, এরই মধ্যে বোরোধান কাটা মাড়াই পরোদমে শুরু হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার এ পর্যন্ত ২৩ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের মধ্যে জমির সব জমির ধান কাট-মাড়াই হবে বলেও জানান তিনি।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –