• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নেপথ্যে কারা তা-ও একদিন বের হবে

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২১  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, যারা পাশে ছিল, যারা এভাবে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে, সবাই কিন্তু সমানভাবে দোষী। আমি অনেক ঘটনা জানি। কিন্তু আমি শুধু আগে হত্যার বিচার জরুরি ছিল, সেটা করেছি। ধীরে ধীরে কারা এর পেছনে জড়িত ছিল, সেটাও একদিন বের হবে। তবে সে দিনও বেশি দূরে না।’ তিনি গতকাল সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস স্মরণে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনাসভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। 

আলোচনাসভায় ২৫ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র, তাঁকে হত্যার পেছনের কারণসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৪টায় আলোচনাসভা শুরু হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। আলোচনাসভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা মানুষ তাঁর জীবনের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন জাতির জন্য। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি নিজের কথা ভাবতেন না। মানুষের কথা ভাবতেন। বাংলাদেশের মানুষ যারা একবেলা খেতে পারত না, চিকিত্সা নাই, শিক্ষা নাই, ঘরবাড়ি নাই, সেই শোষিত-বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। একটি মানুষ যদি স্বাধীন হয়, তাহলে সে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য যখন হত্যাকাণ্ড হয়, তখন সে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে হত্যা করে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটল, যেটা একমাত্র কারবালার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। কারবালাতেও কিন্তু শিশু ও নারীদের হত্যা করেনি। বাংলাদেশে শিশু ও নারী কাউকে রেহাই দেয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের অনেকে প্রতিবাদ করেছে, করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর যখন ফিরে এলেন, এসে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজে হাত দিলেন। আমার নিজের কয়েকটি প্রশ্ন সব সময় মনে আসে।...১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি ফিরে এসেছেন। কিন্তু সেই ’৭২ সাল থেকেই কিন্তু ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, যারা বড় বড় নেতা ছিল, তারা তো অনেকেই পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে গেছে। যারা এ দেশে ছিল তারা কোথায় গেল? তারা যেন হঠাত্ উধাও হয়ে গেল। তারা সব গিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল। আর আমাদের দেশে সে সময়ের পত্রপত্রিকা যদি আপনারা পড়েন। আপনারা আজকে পেছনে কে আছে না আছে খুঁজে বেড়াচ্ছেন? বেশি খোঁজার তো দরকার নাই। আপনারা তখনকার পত্রপত্রিকার খবরাখবর একটু খুঁজে বের করেন। অনেক কিছুই আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা দেশ স্বাধীন হবার পরে সেটাকে গড়তে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে একটি বছরও সময় দেওয়া হলো না। সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনা শুরু হলো। আর ধৈর্য ধরা হলো না। এটা নাই, ওটা নাই, এটা হলো না, ওটা হলো না, এটা হচ্ছে না কেন, ওটা হচ্ছে না কেন, নানা কথা লেখা হলো। কারা লিখেছিল? কাদের খুশি করতে? এবং কারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অবস্থাটা তৈরি করছিল? যেটাকে বলে গ্রাউন্ড প্রিপেয়ার করা, সেটা কারা করেছিল? আমি জানি যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিল, যারা নিজের মুখে স্বীকার করেছে, বিবিসিতে ইন্টারভিউ দিয়ে ফারুক, রশীদ বলেছে তারা হত্যা করেছে, তার কারণ একটা চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার। কিন্তু সরাতে পারে নাই বলেই তারা এই হত্যাকাণ্ডটা সংঘটিত করেছে। এটা হলো বাস্তবতা। কাজেই তখন যারা লেখালেখি করেছে, বক্তব্য দিয়েছে, তারা তো এদেরই দোসর হিসেবে কাজ করছিল।’

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অবস্থান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে খুনিদের বিচার হয়েছে। এখনো যারা কয়েকজন পলাতক, তাদের মধ্যে ডালিম পাকিস্তানেই আছে তখন থেকে। রশীদ পাকিস্তান ও লিবিয়া—এই দুই দেশে থাকে। মাঝে মাঝে ডালিম কেনিয়াতেও যায় বা অন্য দেশে যায়। সে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়েই চলে। আর রাশেদ, নূর কানাডায়। আরেকজন তো আমেরিকায় আছে। শুধু মোসলেহ উদ্দিন, তার খোঁজ মাঝে মাঝে পাওয়া যায়, মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না, এমন অবস্থার মধ্যে আছে। কিন্তু পাকিস্তানি সরকারকে বহুবার বলা হয়েছে। তারা এটা স্বীকারও করে না, কাউকে দেয়ও না।’

তিনি বলেন, ‘একসময় নূরকে কানাডা থেকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সেই সময়ে কানাডায় আমাদের যে হাইকমিশনার ছিল, সে ছিল মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে রফিক। সে কিন্তু একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার যে দায়িত্বটা পালন করার কথা ছিল, তা কিন্তু সে পালন করে নাই। নূরকে সে ডিপোর্ট করার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। কারণ এখানে হাইকমিশনারের একটা দায়িত্ব থাকে। তারপর থেকে সে (নূর) ওখানে কেস করে করে আছে। নূর আর কামাল কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে একসঙ্গে কাজ করত। যখন এ গুলি চলে (১৫ আগস্টে), নূর, হুদা এরা যখন ঢোকে, ফারুকও তখন ওখানে ছিল। কামাল তখন তাদের দেখে বলেছিল, আপনারা এসে গেছেন, দেখেন কারা আমাদের বাসা আক্রমণ করেছে। কিন্তু সেই কথা শেষ করতে পারে নাই। সঙ্গে সঙ্গে ওরা গুলি চালায়। কামালকেই প্রথমে হত্যা করে। এরপরে তো জাতির পিতাকে হত্যার সঙ্গেও এরা জড়িত।’

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –