• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

কেমন ছিল ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট দিনটি? 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২১  

১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সামাদ গামা, বেনু, ভোম্বল, দুরমুজ খাঁ, জাহাঙ্গীর, আজহার, মান্নান, আব্দুল্লাহ, মালেক, মকবুল, কাশেম, তমছের আলী, ফজলুল হক, দুলাল, শামসু, বজলু, পিন্টু, বাবলুসহ ৪০ জন যোদ্ধার একটি দল মর্টারের গোলা ছুঁড়তে ছুঁড়তে মটরা সেতু দখল করে করটিয়ার দিকে এগোতে থাকে।

করটিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৩ শত পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকার মুক্তিবাহিনীর চাপের মুখে টিকতে না পেরে করাতিপাড়া থেকে করটিয়া এবং করটিয়া থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে সরে গিয়ে বাংড়া ও পৌলির কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। শত্রু এতই ভীত ও আতঙ্কের শিকার হয়েছিল যে, করটিয়া ঘাঁটি থেকে পিছিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যেতেও সাহস পায়নি। মুক্তিযোদ্ধারা দখল নেয় করটিয়ার।

বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম  কামরুজ্জামান মুজিবনগরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এখন কেবল মুক্তিফৌজ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ লড়াই এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশবাসী হানাদারদের বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব ও ২৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আবেদন জানান। ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর পোটখালী বি ও পি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকহানাদার সৈন্যরা পোটখালী বি ও পি অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী পোটখালী বি ও পি দখল করে সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপন করে।

পাকনেভী সুন্দরবনের ভেতরে মুক্তিবাহিনী লাওতাড়া ঘাঁটির ওপর দু’দিক থেকে আক্রমণ চালায়। পাকহানাদারদের এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পিছু হটে খুলনা জেলার আশাসুনি থানার বড়দল ঘাঁটিতে ফিরে আসে। লন্ডনে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী বৃটিশ মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বর্তমানে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, তা সেনাবাহিনীর সৃষ্ট নয়। এর জন্য দায়ী সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযোদ্ধা)।

ঢাকা শহর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ মনসুর আলী প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যথাযথভাবে আজাদী দিবস পালনের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অবশ্যই আমাদেরকে দুষ্কৃতকারী ও বিছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশের আদর্শ ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।

যুগান্তর পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গীশাহী ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর সেনাসজ্জা তৎপরতা বাড়িয়ে তুলেছে। পাক জঙ্গীবাহিনী সীমান্তের ষাটটি চৌকিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। কিন্তু সেনাকমান্ডের নির্দেশ সত্ত্বেও নদী, জলপথ, পাহাড় দিয়ে বিস্তৃত ২৭০টি সীমান্ত ফাঁড়ির ওপর সফল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এখনো সফল হয়নি। মুক্তিবাহিনী সমগ্র সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং নানা অঞ্চলে আরও বেশি অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়েছে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –