• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

পরিবেশ দূষণ রোধে বাড়াতে হবে বন্ধু চুলার ব্যবহার

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার যেসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়েছিল বন্ধু চুলা। কিন্তু বন্ধু চুলার সুফল তুলে ধরে সঠিকভাবে প্রচারণা না হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে এ চুলার ব্যবহার তেমন বাড়ছে না। 

দেশের উত্তরের এ জেলায় ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। যার মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ পরিবার দারিদ্র্য সীমারেখার নিচে বসবাস করে। যারা এখনো প্রচলিত চুলায় রান্নার কাজ করেন। জেলার, আকচা, দেবীপুর, রায়পুর, বালিয়া, দুওসুও, হরিপুরসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নে দেখে গেছে ১৫ শতাংশ মানুষের বাড়িতে বন্ধু চুলা স্থাপন করা হয়েছে। অনেকে এই চুলা স্থাপন করলেও তা ব্যবহার করছে না।

হরিপুর সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন গেদুরাতে এক গৃহিণীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জরিফা আক্তার নামের ঐ গৃহিণী বলেন, বন্ধু চুলার হিসাব-নিকাশ বুঝি না। চুলা সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য কি সব নিয়ম কানুন শিখিয়েছিল চুলা স্থাপন করার সময় সব ভুলে গেছি। পরে আর কেউ আসেনি তাই পুনরায় জেনে নেওয়া হয়নি। 

দুওসুও গ্রামের শ্রমিক হালিমা খাতুন বলেন, বন্ধু চুলার নাম শুনেছি কখনো দেখিনি। আমি জানি না কীভাবে বন্ধু চুলার ব্যবহার করতে হয়। আকচা এলাকার দিলজান বেগম বলেন, বন্ধু চুলাতে রান্না করার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। চুলা জ্বালানো, কীভাবে জ্বাল দিলে ভালো তাপ আসে—এর কিছু নিয়ম আছে। আমি এই নিয়ম অনুসরণ করি। আমার অসুবিধা হয় না। বরং এ চুলাতে রান্না নিরাপদ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তেমন নেই। বন্ধু চুলা রান্নাঘরে ধোঁয়া ছড়ায় না। জ্বালানির ব্যবহারও কম। রান্নাঘরের টিনের ক্ষতি হয় না। খাবারেও ধোঁয়ার গন্ধও আসে না। 

সমাজকর্মী সাবানা শাহিন বলেন, রান্নাঘরে ছাই উড়ে গায়ে পড়ে, আবার ধোঁয়ায় চোখ লাল হয়ে যায়। বন্ধু চুলা এ ভোগান্তি থেকে রেহাই দেয়। কিন্তু স্থাপনের পর তা তদারকি করা হয় না বলে এর সঠিক ব্যবহার মানুষ করতে পারছে না। আবার অনেকে আধুনিকতার জন্য গ্যাস বা ইলেক্ট্রিক চুলা ব্যবহার করছে। কিন্তু এখনো গ্রামে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রচলিত চুলার ব্যবহার রয়ে গেছে। প্রচলিত চুলার ধোঁয়ার কারণে নারীরা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদেরও ক্ষতি হচ্ছে। 

স্থানীয় মাহাবুব আলম রুবেল বলেন, বন্ধু চুলা অবশ্যই দারুণ একটা উদ্যোগ। কিন্তু বাস্তবে এর ব্যবহার বাড়ছে না। শুরুর দিকে এর তদারকি, প্রচারণা ছিল। মানুষও আগ্রহ দেখিয়েছিল। এখন প্রচারণা পুরোপুরি ঝিমিয়ে গেছে। ফলে এর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমতে শুরু হয়েছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত চুলায় হয় রান্না। প্রচারণার মাধ্যমে বন্ধু চুলার ব্যবহার ও গুরুত্ব তুলে ধরা না গেলে এর ব্যবহার বাড়বে না। বন্ধু চুলা স্থাপনের পর এর তদারকিও গুরুত্বপূর্ণ।

বন্ধু চুলার উদ্যোক্তা রবি রায় জানান, বন্ধু চুলার কার্যক্রম এখন ঝিমিয়ে গেছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একজন করে উদ্যোক্তা শুরুর দিকে থাকলেও এখন আর নেই। যার কারণে প্রচারণা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমি ৮ ইউনিয়নে একাই বন্ধু চুলা নিয়ে কাজ করছি। উদ্যোক্তা বাড়লে এ চুলা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। আমরা প্রতিটি চুলা ৫০০ টাকা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে থাকি। 

বন্ধু ফাউন্ডেশন ঠাকুরগাঁওয়ের জোনাল ম্যানেজার শামিম বাবু জানান, জেলাতে বন্ধু চুলা এসেছে ২০১১ সালে। ২০১৬-১৭ দিকে এর চাহিদা বেশ ভালো ছিল। বর্তমানে জেলা ৪০ হাজারের বেশি মানুষ এ চুলা ব্যবহার করছে। আমরা প্রচারণা ও বন্ধু চুলা সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ধীরে ধীরে ব্যবহারকারী বাড়বে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –