• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সাবিনার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা অভাব

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২২  

ঠাকুরগাঁও সদরের চিলারং আরাজি ঝাড়গাঁও গ্রামের দিনমজুর ঘরের মেধাবী ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ময়মনসিংহ সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ডাক্তার হতে প্রধান বাধা এখন অভাব। অভাবের কারনে মেডিক্যালে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে গেছে তার।
কথা হলে এসব কথা জানান মা বিউটি আক্তার ও মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন।

অনেক চোড়াই উৎরাই পার করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া গ্রাম আরাজি ঝাড়গাঁয়ের মেধাবী সাবিনা এবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি এখন তার অনিশ্চিত।

সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অনেক ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার। আমার মা আমাকে উৎসাহ দিয়ে পড়াশোনা করিয়ে আসছেন। আমার এতদিনে লেখাপড়ার খরচ চালাতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। গাভী বিক্রি করতে হয়েছে, এছাড়াও শখের অনেক জিনিসও বিক্রি করেছে মা-বাবা। তারপরেও আমাকে লেখাপড়া শেখাতে একটু পিছপা হননি তারা। এর জন্য গ্রামের অনেক মানুষ অনেক কথায় বলেছে। বাল্যবিয়ে দেয়ার কথাও বলেছে। মেয়েদের এত পড়াশোনা করানো ঠিক না এমনও কথা শুনিয়েছে। কিন্তু আমার মা সেদিনের ডাক্তারকে দেখে যে স্বপ্ন দেখেছেন আমাকে নিয়ে সে স্বপ্ন থেকে এক চুলও নড়েননি। অভাবের সংসারে থেকেও একদম শূণ্যহাতে এখন পর্যন্ত তিনি আশায় বুক বেধে আছেন আমি একদিন ডাক্তার হবো। 

বিউটি আক্তার বলেন, তীরে এসে তরী ডুবে যাবে এটা আমি মানতে পারছিনা। আমার ঘরে কোন টাকা নেই। আমার মেয়েটা অনেক মেধাবী। তাকে আমি কথা দিয়েছি বেঁচে থাকলে তাকে মানুষের কাছে হাত পেতে হলেও লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের ডাক্তার বানাবো।
আমি সেদিন ডাক্তারের চেম্বারে মেয়েকে নিয়ে অনেক দু:শ্চিন্তায় ছিলাম। মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল সাবিনা। হাতে টাকা ছিলোনা। সেদিন ওই ডাক্তার আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমি সেদিন বুঝেছিলাম আমার মেয়ে এমন ডাক্তার হলে সে অন্য মায়ের মন খুশী করাতে পারবে। যদি কেউ সহযোগিতা করেন আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। প্রয়োজনে কাজ করে ধার শোধ করবো। আমার মেয়েকে সহযোগিতা করুন।
বাবা আনিসুর রহমান বলেন, গতরে যখন শক্তি ছিল তখন মাঠে কামলা দিয়ে রোজগার করতাম। মেয়ের কিছুটা চাহিদা পূরণ করতে পারতাম। কিন্তু এখন পারিনা। গতরে শক্তি কুলায়না। দেনা করে পড়াশোনা করাই মেয়েকে আর গাভী পালন করে বিক্রি করে দেনা শোধ করি। এভাবেই চলতো। কিন্তু এখন আমার মেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের এত কাছে এসেও তা সম্ভব হচ্ছেনা। আমি একবারই নিরুপায়। এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছিনা। সরকারের কাছে অনুরোধ কিছু একটা করুন।

স্থানীয় আব্দুল খালেক বলেন, সাবিনা গ্রামের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। গোটা গ্রামে সে প্রথম এইচএসসি পাস করেছে। রংপুরের একটি কলেজে পড়াশোনা করেছে। তারা বাবা মা অনেক কষ্ট করে ধার দেনা করে তাকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। সে গ্রামের গর্ব। এবারে মেডিক্যালে পড়াশোনা করার সুযোগ সে পেয়েছে। মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আমরা চাই তাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিক সরকার। ও দেশের একদম খাঁটি একটি সম্পদ এতে কোন সন্দেহ নেই আমাদের গ্রামবাসীর।

ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার বলেন, অত্যন্ত মেধাবী সাবিনা ইয়াসমিন। নীতি ও আদর্শ নিয়ে জীবন যাপন করেন। প্রাইভেটের টাকা দিতে পারতোনা বলে সে প্রাইভেটে আসতে চাইতোনা।  আমরা শিক্ষকরা তাকে বিনা পারিশ্রমিকে প্রাইভেট পড়ানোর চেষ্টা করেছি।  সে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে শুনে আনন্দে চোখে জল গড়িয়েছিল। এখন খুব খারাপ লাগছে মেডিক্যালে পড়ার মতো সামর্থ তার নাই। আমি শিক্ষক হয়ে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান করবো। সত্যি  সাবিনা ডাক্তার হলে বাংলাদেশ একজন ভালো ডাক্তার পাবেন।

ঠাকুরগাঁও  সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো: সামসুজ্জোহা বলেন, মেধাবীরা ভালো স্থান পাক এটি আমরা সকলে চাই। আমরা সরকারী ভাবে তাকে সহযোগিতা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –