• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ভালোবাসার সুবাস ছড়িয়েছে ৩ ফুট উচ্চতার স্বামী-স্ত্রী

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

ভালোবাসা নাকি রং বদলায়৷ কারণে বা অকারণে বদলে যায়৷ ভালোবেসে একসঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকলেও আবার নিমিষেই বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ আবার ঠুনকো কারণ কিংবা অমিল ঘটলেও একজন আরেকজনকে ছেড়ে যায়। তবে হাজারো মতের অমিল ও মানুষের কটাক্ষ কোনোকিছুই ছুঁতে পারেনি নীলকান্ত-গীতা দম্পতিকে। সব উপেক্ষা করে ভালোবেসে একসঙ্গে অতিক্রম করছেন দুই যুগেরও বেশি৷ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নীলকান্ত ও গীতা রানি। কয়েক মাসের প্রেমের পর ১৯৯৮ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন তারা৷ সাংসারিক জীবনে এক মেয়ে সন্তানের অভিভাবক তারা। দুইজনের উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। এত কম উচ্চতা ও খর্বাকৃতি হওয়ায় দুইজনকেই শুনতে হয়েছে সমাজের মানুষের নানান কটু কথা। কিন্তু সেসব কথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একে অপরকে ভালোবেসে একসঙ্গে পার করে দিয়েছেন দুই যুগেরও বেশি সময়। তাদের এমন ভালোবাসার জুটি এখন ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের ভালোবাসা সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। 

শারীরিক গঠনে উচ্চতা কম হওয়ায় প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন এমনকি পরিবারেও কাছে হতে হয় নানা কটাক্ষের শিকার৷ পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলেও সম্ভব হয়নি। তবে পড়াশোনা বা চাকরি করে সফল না হলেও ভালোবেসে সফল হয়েছেন দুইজনে৷ একজন যেন আরেকজনের পরিপূরক। হাজারো অভাবে ছেড়ে যাননি একে অন্যের হাত। তাদের ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্ত নজর কেড়েছে সকলের৷ তাদের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসীও। ঠুনকো কারণে ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলোর কাছে এ দম্পতি যেন শেখার বাতিঘর। 

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কমল রায় বলেন, তারা শুধুমাত্র দেখতে খাটো৷ এটিই তাদের একটা অপূর্ণতা। সবার জীবনেই একটা না একটা সমস্যা থাকে৷ তাদের জীবনে এরকমটাই ছিল৷ তবে তাদের মধ্যে যে মহব্বত এটা অনেক বেশি৷ আমরা তাদের মাঝে কখনো বড় কোনো সমস্যা দেখিনি। তারা সবসময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করেন৷ তাদের মতো স্বামী-স্ত্রী প্রতিটা সংসারে হওয়া উচিত। 

গীতা রানী বলেন, সংসার মানে সমস্যা, ঝগড়া ও নানা ঝুট ঝামেলা। অনেক সময়ে এসব বাড়লেও কখনো ভাবেননি তাকে ছেড়ে যাব৷ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা৷ 

নীলকান্ত বর্ম্মণ বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচাতে চেয়েছেন৷ তিনি আমাকে ভালো রেখেছেন। মানুষের কটু কথা শোনেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। তবে সমস্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি৷ তারপরে কাজ করে সংসার চালায়৷ এক মেয়ে আমার। তাকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছি৷ বাবার দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই৷ 

শুধু যে ঘরটিতে আমি থাকি সেটি আমার। বাবা-মায়ের ঘরটা মায়ের নামে৷ কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। মা আমার নামে জমিটা দিতে চান৷ তবে সেটি আমার নামে করে নেয়ার মতো কোনো খরচ আমার নেই৷ কয়েক মাস আগে এক দোকানে থাকতাম। সেটা বাদ দিয়ে এখন দিনমজুরি করি৷ ঘরটাও আমার প্রায় ভাঙা। তারপরেও আমার স্ত্রী সঙ্গ দিয়ে আসছেন৷ কখনো তিনি আমাকে হতাশ করেননি। সবসময় আমাকে সার্পোট দিয়ে থাকেন৷ এটি আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আর ঘর সংস্কারের জন্য আমাকে আপনারা সহযোগিতা করতে পারেন৷

সদর উপজেলার নারগুন ইউপি চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, তারা একই উচ্চতার। তাদের মধ্যে ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা সুন্দর করে জীবনযাপন করছেন। তারা ভালাবাসার কথা এখন সবার মুখে মুখরিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –