• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বাউ মুরগি পালনে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের নারীরা 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৪  

কৃষিতে স্বনির্ভর দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। কৃষি প্রধান হওয়ায় তাই এ জেলার মানুষের আয়ের মূল উৎস কৃষি ও গবাদি পশু-পাখি পালন। আর অর্থকরী এ কাজে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে নেই এখানকার নারীরাও। পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করে অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়েও অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখছেন এ অঞ্চলের নারীরা।  

এবার বাউ জাতের মুরগি পালনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের নারীরা। আর তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছে ইএসডিও নামের একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা। সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় ইএসডিও নিরাপদ মাংস উৎপাদনের লক্ষে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১৫০টি করে প্রায় ৩ হাজার নতুন এ জাতের মুরগির বাচ্চা এবং মুরগির ঘর বানানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়।

জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, বাউ মুরগি হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ কর্তৃক উদ্ভাবিত মাংসের জন্য মুরগি, যার মাংসের স্বাদ দেশীয় মুরগির মত। বাউ মুরগি ৪৫ দিনেই প্রায় ১ কেজি হয়ে থাকে। এ মুরগি প্রতিপালন হয় খামারে এবং বৃদ্ধি বয়লারের মত। এ মুরগির রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সোনালী ও বয়লারের চেয়ে বেশি তবে এর মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। এ জাতের মুরগির খাদ্যে রূপান্তর দক্ষতার অনুপাত ২:১ অর্থাৎ বাউ মুরগি ২ কেজি খাদ্য খেয়ে ১ কেজি মাংস উৎপাদন করতে পারে।

শাকিলা আক্তার নামের বাউ মুরগির খামারি জানান, আমি আগে বাসার কাজেই ব্যস্ত থাকতাম। স্বামীর যে আয় তাতে সংসার চালাতে বেশ বেগ পেতে হত। আমি ইএসডিও থেকে এ মুরগির বাচ্চা ও ঘর তৈরির সহযোগিতা পেয়ে এগুলি পালন শুরু করি। আমার প্রতিটি মুরগিই প্রায় ১ কেজির বেশি হয়ে যাওয়ায় মোটামুটি বিক্রি শুরু করেছি। আমি প্রতিটি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এতে আমার সংসারে একটি বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি হয়েছে। আগামীতে আমি আরো বড় পরিসরে এ মুরগি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

সেলিনা নামের অপর এক নারী খামারি জানান, আমার স্বামীও আমার এ কাজে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। আর্থিকভাবে উন্নতি হচ্ছি বলেই স্বামী এ সহযোগিতা করছে। আমার মুরগি গুলি পাইকাররা এসে বাসা থেকে নিয়ে গেছে এবং এতে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। এ মুরগির নষ্ট হবার বা মারা যাবার ভয় নেই। এছাড়াও আমাদের স্থানীয় বাজারে এর যে চাহিদা তৈরি হয়েছে তাই আবারো বড় আকারে এ মুরগির খামার করবো আমি।

শাকিলা, সেলিনা বা স্বপ্নার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এ মুরগি পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় নারীরা। তারা বলেন, আমরা নিজ চোখেই দেখলাম মাত্র দেড় মাসের মধ্যে এ মুরগির খামার করে কিভাবে সংসারে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা যায়। আমরাও ইএসডিও থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ মুরগি পালন করবো।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার রায় জানান, বাউ জাতের মুরগিটা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ থেকে উদ্ভাবিত একটি নতুন জাতের মুরগি। এ মুরগি দেখতে ও স্বাদে হুবহু দেশি মুরগির মতই, কিন্তু এর গ্রোথ বা বাড়ার হার বেশি এবং এর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও অনেক বেশি। আমাদের দেশে এ মুহূর্তে যে সোনালী মুরগি নামের যে মুরগিটির প্রচলন বেশি এর চেয়েও বাউ জাতের মুরগির রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি। আমরা বিভিন্ন সেমিনার বা সভায় এ মুরগি পালনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে খামারিরা লাভবান হয়। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –