• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভ্যান চালিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেলেন রাণীশংকৈলের রমজান

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 
মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারায় রমজান৷ তারপর থেকে মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা তার৷ স্বামীকে হারিয়ে চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরে রমজানের মা৷ সন্তানদের ভরণ পোষণ জোগাতে হাড়ভাংগা খাটুনি করতো তার মা৷ পারিবারিক অস্বচ্ছলতা আর তীব্র অভাবের ভিড়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল বেশ দুষ্কর৷ পরিবারের কষ্ট লাঘবে মাকে সাহায্য করেন তিনি। 

অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হত তা থেকে কিছু টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতো রমজান৷ এসএসসির আগের পড়াশোনার খরচ চালাতে খুব বেশি কষ্ট না হলেও পরে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। কোন কিছুর লাজলজ্জা না করে শুরু করেন ভ্যান চালানো৷ মনে যে স্বপ্ন স্থির, পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করে করতে হবে ভাল চাকুরি৷ তবে সফলতার হাতছানি ছুঁয়েছে রমজানের৷ প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে৷

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের মীরডাঙ্গী গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে রমজান আলী। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বাড়ির পাশে মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.১১ ও প্রকাশিত এইচএসসি ফলাফলে রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে৷ অতি কষ্টের মাঝে এমন ফলাফলে নতুন স্বপ্নের ছোঁয়া পেয়েছে সে ও তার পরিবার। তার ফলাফলে খুশি পরিবার ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, তার জীবনটা একটা সংগ্রাম। অনেক কষ্ট করে সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, ভ্যান চালিয়ে ভাল ফলাফল করেছে। তার ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। আমরা তার পাশে ছিলাম। আগামীতেও তার পাশে দাঁড়াব৷ সেই সাথে সকলকে তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।

কষ্টার্জিত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল শুনে রমজান আলী বলেন, পরীক্ষা শেষ করার পর আমি ঢাকায় চলে আসি। এখানে এসে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করি। এখনো গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত আছি৷ ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর পাইনি৷ মা অনেক কষ্ট করে আমাকে লালন পালন করেছেন৷ মায়ের সাথে কাজ করে নিজের খরচ ও পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। তবুও পিছপা হয়নি। স্বপ্ন ছিল একদিন ভালো ফলাফল করে একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব৷ আজকে একটা মনের আশা পূরণ হল। আমি পরীক্ষা দেওয়ার সময় যে দিনগুলোতে ফাঁকা ছিল ভ্যান চালিয়ে আয় করেছি। আমার মা বলতো আমি ভালো ফলাফল করব আজকে সে আশা পূরণ হয়েছে। গতকালকে গার্মেন্টসে বলেছি আজকে আমার ছুটি লাগবে৷ ছুটি নিয়ে আজকে বাসায় ছিলাম। জিপিএ -৫ পেয়ে আমি আজ অনেক খুশি। রেজাল্ট শোনে সব কষ্ট ভুলে গেছি। আমার মা অনেক খুশি হয়েছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি ও পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাইলে রমজান আরো বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে কোচিং করতে পারিনি৷ সে কারণে ভাবছি এক বছর পর ভর্তি হব। তারপরেও চেষ্টা করব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। ভবিষ্যতে ভালো একটি চাকুরি করে পরিবারের কষ্ট লাঘব ও দেশ সেবা করব৷

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকারনাইন বলেন, বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের তেমনি অনুপ্রেরণার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –