• শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মা-বাবা বেচেন চা, মেয়ে হলেন দেশসেরা ফুটবলার

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৪  

ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ভালো লাগা ছিল সাগরিকার। প্রাথমিকে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়েই খেলা শুরু হয় তার। এরপর রাঙ্গাটুঙ্গি মাঠে ফুটবলের সঙ্গে প্রেমে মত্ত হয়ে উঠেন সাগরিকা। তবে ফুটবল প্রেম ক্রমশ যেন বিরক্তিকর হয়ে উঠে৷ মেয়েরা ফুটবল খেলে দেখে গ্রামের মানুষের নানা কটুক্তি হজম করতে হয়েছে তাকে৷ পরিবারের অভাব-অনটন, নানা বাধা ও প্রতিবেশীদের কটুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এগিয়ে গেছেন সাগরিকা। এ ফুটবলের যাদুতে চমক দেখিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন সাগরিকা৷ 
 
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের লিটন আলী ও আনজুয়ারা বেগমের সন্তান সাগরিকা। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠা তার। ফুটবল খেলা শুরু করার পর নানা ভাবে কটূক্তি করতেন গ্রামের অনেকেই। তাদের কথায় বিরক্ত হয়ে সাগরিকার বাবা মেয়েকে মাঠে যেতে বারণ করে ঘরে আটকে রাখতেন। এসব উপেক্ষা করেও মাঠে চলে যেতেন সাগরিকা। এক সময় রাঙ্গাটুঙ্গি ফুটবল দলের পরিচালক তাজুল ইসলামের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হলেন সাগরিকার বাবা মা। ফুটবল অনুশীলনে নামলেন সাগরিকা।

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে সেই খেলায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে সাগরিকার গোলেই সমতায় ফেরে। এরপর থেকেই আলোচিত হয়ে উঠে সাগরিকা। এক সময় যারা করতেন কটূক্তি আজ তারাই দিচ্ছে বাহাবা। এখন সেই সাগরিকাই গোটা গ্রামবাসীর গর্ব। ফুটবল খেলার জেদের কারণে দীর্ঘ ১ মাস মেয়ের সাথে কথা না বলা সেই বাবার মুখ সবার কাছে উজ্জল করে তুলেছেন মেয়ে সাগরিকা।

রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামে অন্যের জমিতে বসবাস করেন সাগরিকা। ওই উপজেলার বলিদ্বারা এলাকায় চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান তার বাবা লিটন আলী। তার দুই সন্তানের মধ্যে সাগরিকাই ছোট। আর ছেলে মোহাম্মদ সাগর একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। অভাবের সংসারে মেয়ের সফলতায় হাসি ফুটেছে তাদের। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর গর্ব হয়ে উঠেছেন সাগরিকা। প্রতিনিয়ত তার বাসায় ছুটে আসছেন অনেকেই। তবে নিজের কোনো জমি বা বাসা না থাকায় আনন্দের মধ্যেও যেন রয়েছেন কিছুটা কষ্ট। অন্যের জমিতে তোলা ছোট্ট সেই খুপরির ঘরে কীভাবে বসতে দেবেন অন্যদের তাই সাগরিকার বন্ধুদের বাড়ি আনার আবদারে সায় মিলছে না তাঁর মায়ের। 

সাগরিকার সফলতা দেখে মুগ্ধ খুশি গ্রামবাসী। তার ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান স্থানীয়দের। 

সাগরিকার মা আনজুয়ারা বেগম বলেন,মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবো না। কেন ও মেয়েকে ছোট জামা-কাপড়ে পড়ে খেলতে দিতে হবে। লাজ-লজ্জা সব উঠে গেল৷ এরকম নানা ধরনের কথা শোনতে হয়েছে। মেয়েকে বাধা দেওয়ার পরও সে বাদ দেয়নি৷ এখন মেয়ে আমার দেশ-বিদেশে খেলে সফলতা আর সুনামে বয়ে এনেছে। আমাদের গ্রামের এখন সবাই গর্ব করে তাকে নিয়ে। আমার মেয়ের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন। সে যাতে আরো ভালো খেলতে পারে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে। 

আবেগ প্রবণ হয়ে ফুটবলার সাগরিকা বলেন, শুরুতে অনেক মানুষের নানা ধরনের কটু কথা শোনতে হয়েছে। ফুটবলের কারণে এক মাস ধরে বাবা আমার সঙ্গে কথা বলেননি৷ সব ভুলে এখন তাদের আদরের হতে পেরেছি৷ বাকীটা সময়  নিজের পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চায়। পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব যাতে আমার পরিবারের পাশে তারা দাঁড়ান৷ 

রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, যারা এ মাঠে খেলেন তারা সবাই একদম নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা৷ কেউ দিনমজুরি, কেউ চায়ের দোকান কেউবা ভ্যান চালিয়ে পরিবার পরিচালনা করেন৷ সাগরিকার বাবা-মা চায়ের দোকান করে থাকেন৷ নিজের কোনো বসতভিটা নেই। সরকারি জায়গায় তারা থাকেন৷ আমি তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনকে বিনীতভাবে আহবান করছি৷ 

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাঙ্গাটুঙ্গি মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ে অনেক নারী ফুটবলার খেলছে। তার মধ্যে সাগরিকা চমক দেখিয়েছে। আমরদ তার পারিবারিক বিষয়ে অবগত হয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –